ঢাকা, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সাত দফা দাবিতে নতুন বার্তা দেবে দলটির আমির

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের প্রথম জাতীয় সমাবেশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০৭:৪৮ সকাল  

ছবি: সংগৃহিত

ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার দুপুর ২টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাত দফা দাবিতে প্রথমবারের মতো একক জাতীয় সমাবেশ আয়োজন করতে যাচ্ছে। সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই ইসলামী সংগীত পরিবেশন ও নানা আয়োজনে মুখর থাকবে উদ্যান এলাকা। এর আগে কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এককভাবে সমাবেশ করেনি জামায়াত। এবার দলটির শীর্ষ নেতারা স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগমের প্রত্যাশা করছেন।

সমাবেশে নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ‘জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাবেন। বিশেষভাবে ‘চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা’ সামনে রেখে রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের বার্তা দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জামায়াতের ঘোষিত সাত দফা দাবি হলো- 
১. সব গণহত্যার বিচার,
২. রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কাঠামোয় প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার,
৩. জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন,
৪. জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারের পূর্ণ পুনর্বাসন,
৫. সংখ্যানুপাতিক ভোট (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন,
৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ,
৭. জাতীয় নির্বাচনের আগে সমতাভিত্তিক রাজনৈতিক পরিবেশ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি।

সমাবেশ সফল করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ৩৬ ফুট প্রশস্ত একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চে থাকবে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, এলইডি মনিটর এবং অতিথিদের জন্য আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা। সমাবেশে ৩৩টি এলইডি স্ক্রিন, তিন শতাধিক মাইক, পর্যাপ্ত আলো, ১৫টি মেডিকেল বুথ এবং ৫০-৬০ হাজার বোতল পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবহন রিজার্ভ করা হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে অংশগ্রহণকারীদের ঢাকায় আনার জন্য ১০ হাজার বাস, কয়েক জোড়া ট্রেন এবং লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, ঠিক তখনই জামায়াতে ইসলামী নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা প্রদর্শনের লক্ষ্যে এই সমাবেশ করছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামায়াত নতুন উদ্যমে রাজনীতির ময়দানে ফেরার চেষ্টা করছে।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন,
“স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এবং দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনে জামায়াতের ওপর যে দমন-নির্যাতন হয়েছে, তা আজ ইতিহাস। এখন একটি উন্মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো জাতীয় সমাবেশের মাধ্যমে আমরা নতুনভাবে নিজেদের শক্তি প্রমাণ করতে চাই।”

ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দুই মহানগর থেকে কয়েক লাখ মানুষ সমাবেশে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যানবাহনের জন্য আলাদা পার্কিং স্পট, অজু-নামাজের জায়গা, টয়লেট, চিকিৎসক দল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সমাবেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে থাকবেন।

সমাবেশের মূল মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যরা, জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরা। বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

বাংলাধারা/এসআর