সিরিয়া-ইসরায়েল সংঘাতের অবসান: চার দিন রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর যুদ্ধবিরতিতে সমঝোতা
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০২:০৭ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী দুই দেশ সিরিয়া ও ইসরায়েল টানা চার দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২১ জন নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি লিখেছেন,“তুরস্ক, জর্ডান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসরায়েল ও সিরিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আমরা দ্রুজ, বেদুইন ও সুন্নি সম্প্রদায়ের সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি অস্ত্র সমর্পণ করে একসঙ্গে একটি নতুন সিরিয়া গঠনে এগিয়ে আসুন।”
রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য তারা ওয়াশিংটনের ইসরায়েলি দূতাবাস ও কানাডার সিরীয় কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে উভয় কূটনৈতিক মিশন থেকে তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত মঙ্গলবার দক্ষিণ সিরিয়ার সোয়েইদা প্রদেশে একটি পারিবারিক জমায়েতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়। হামলাকারীরা প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা-র নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থি সুন্নি জোট হায়াত তাহরির আল শামস (এইচটিএস)-এর সদস্য বলে জানা গেছে।
পরের দিন, বুধবার, ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সোয়েইদায় সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। তেল আবিব জানায়, সিরিয়ায় দ্রুজ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছে, আর ইসরায়েল দ্রুজ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগেও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সোয়েইদায় দ্রুজ, বেদুইন ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত চলছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা পাঠালেও প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা’র ওই পদক্ষেপ সংঘাত থামাতে ব্যর্থ হয়, বরং সহিংসতা আরও বেড়ে যায়।
চার দিনের লড়াইয়ে সোয়েইদার মানবিক পরিস্থিতি চরম সংকটে পড়েছে। খাদ্য, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মজুত শেষের পথে। বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় যোগাযোগও প্রায় বিচ্ছিন্ন।
সোয়েইদার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী যুবক মুদার রয়টার্সকে বলেন,“আমরা ভয়াবহ অবস্থায় আছি। চার দিন ধরে খাবার নেই, পানি নেই, জ্বালানি নেই, বিদ্যুৎ নেই,এক কথায় কিছুই নেই।”
সিরিয়ার সাম্প্রতিক সংঘাতে বারবার আলোচনায় এসেছে দ্রুজ সম্প্রদায়ের নাম। খ্রিস্টীয় নবম শতকের শেষ দিকে ইরানি সুফি সাধক ইসমাইল নাশতাকিন আদ-দারাজির প্রবর্তিত এই মতবাদ ইসলামের শিয়া ধারার একটি শাখা হিসেবে পরিচিত। তারা নিজেদের ‘আহলে তাওহিদ’ বা একেশ্বরবাদী হিসেবে দাবি করে। মুসলমানদের মতোই আল্লাহ, হযরত মুহাম্মদ (স.) ও চার খলিফার প্রতি তাদের বিশ্বাস রয়েছে। তবে দ্রুজরা আরও বিশ্বাস করেন যে মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি রয়েছে।
বাংলাধারা/এসআর