ঢাকা, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৭, ২০২৫, ১১:০৮ দুপুর  

সংবিধানের বহুল আলোচিত পঞ্চদশ সংশোধনী, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আপিলের শুনানি সর্বোচ্চ আদালতে শুরু হয়েছে। 

রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগে এ শুনানি চলছে। আপিলকারীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।

গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়–যেখানে পঞ্চদশ সংশোধনীর বেশ কিছু ধারাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের আবেদন গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। এরপরই আজ আনুষ্ঠানিক শুনানি শুরু হলো।

২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলসংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনীর ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ঘোষণা করেন। পাশাপাশি গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করা হয় এবং সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত ৭ক, ৭খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদও বাতিল করা হয়। আদালত মনে করিয়ে দেয়, গণতন্ত্র সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, আর দলীয় সরকারের অধীনে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি, যার ফলেই “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের” মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তবে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরোটা বাতিল করা হয়নি। জাতির পিতার স্বীকৃতি, ২৬ মার্চের ভাষণসহ আরও কিছু ধারা বহাল রাখার পাশাপাশি আদালত মন্তব্য করে, ভবিষ্যৎ সংসদ চাইলে জনগণের মতামত নিয়ে সেসব ধারা সংশোধন করতে পারে।

গত ৩ নভেম্বর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন রিটকারী সংগঠন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আপিলে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানানো হয়। আদালতে তাঁর পক্ষে শুনানি করছেন ড. শরীফ ভূঁইয়া।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। বিএনপি, জামায়াত, ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরামসহ বিভিন্ন পক্ষও ইন্টারভেনর হিসেবে যুক্ত হয়ে নিজেদের মত উপস্থাপন করছেন।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়-

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী সংবিধানে এসেছিল এবং এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশে পরিণত হয়েছিল।

৭ক, ৭খ এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে।

গণভোট বাতিল ছিল অসাংবিধানিক; তাই পূর্বের বিধান পুনর্বহাল করা হয়েছে।

আজকের শুনানিতে রাষ্ট্রের পক্ষে উপস্থিত আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।

বিএনপির পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী।

জামায়াতের পক্ষে রয়েছেন অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী।
ইনসানিয়াত বিপ্লব দলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

এ ছাড়া আরও চারজন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, নিশাত মাহমুদ এবং ইন্টারভেনর হিসেবে ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ উপস্থিত ছিলেন।

২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, জাতির পিতার স্বীকৃতি, সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় সংযোজন, পরিমার্জনসহ মোট ৫৪ দফায় সংশোধন আনা হয়।

এই সংশোধনী বাতিলের প্রশ্নে ২০২২ সালের ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করে। দীর্ঘ শুনানির পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয় এবং পরবর্তীতে রায় ঘোষণা হয়।

বাংলাধারা/এসআর