দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির শাটডাউনের ঘোষণা
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৪:০১ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতি আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ‘শাটডাউন’ (বন্ধ) ঘোষণার ঘোষণা দিয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সকল শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন।
তিনি কাকরাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পর বলেন, আমরা এখানে এসেছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার আদায়ের জন্য। আমাদের ওপর পুলিশ যেভাবে হামলা চালিয়েছে, তা চরম অন্যায় ও অরাজকতা। আমরা কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে আসিনি, এসেছি আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক, কোনো শিক্ষার্থী ঘরে ফিরবে না।"
অধ্যাপক রইস উদ্দিন আরও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমাদের সরাতে কোনো পদক্ষেপ নিলে তার ফল ভালো হবে না। আমাদের চোখের সামনে কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না। এটা আমরা সহ্য করব না।”
প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে কাকরাইলে অবস্থান করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী। কেউ কেউ রাস্তায় রাত কাটিয়ে ভোরবেলা থেকেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। ক্লান্তি, ভোগান্তি উপেক্ষা করে তারা প্ল্যাকার্ড হাতে শ্লোগান দিচ্ছেন- “আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়”, “হামলার বিচার চাই”, “বাজেট কাটছাঁট চলবে না।”
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু করা।
- প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট না করে অনুমোদন।
- দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় পাশ ও দ্রুত বাস্তবায়ন।
- ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মিলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করেন। মিছিলটি গুলিস্তান, মৎস্য ভবন হয়ে কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গরম পানি ছুড়ে মারে।
এরপর শুরু হয় লাঠিচার্জ। হামলায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
পুলিশি হামলার ঘটনায় রাতেই শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য দিতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তবে তার বক্তব্য শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারেনি। ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে মুখর হয় চারপাশ। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কেউ একজন বোতল ছুড়ে মারলে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ব্রিফিং বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এই ঘটনার পর আন্দোলন আরও বেগবান হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান সংকট এখন আর কেবল শিক্ষার্থীদের দাবিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি পরিণত হয়েছে এক সম্মিলিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আন্দোলনে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে পুলিশি হামলার বৈধতা, বাজেট কর্তনের সিদ্ধান্ত, এবং শিক্ষার্থীদের আবাসনের মতো মৌলিক চাহিদা উপেক্ষা করা নিয়ে।
শিক্ষক সমিতির শাটডাউনের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট- এ লড়াই থামার নয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল থাকবে। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।
বাংলাধারা/এসআর