উন্নয়ন বাজেটের খসড়া চূড়ান্ত: পরিবহণসহ পাঁচ খাতেই ৭০% বরাদ্দ
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ১২:২১ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
নতুন অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আগের বছরের তুলনায় এডিপির আকার এবার প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটি আগামী রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চূড়ান্ত খসড়া অনুযায়ী, সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে যুক্ত হবে আরও ৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সেই তুলনায় নতুন অর্থবছরের খসড়া এডিপি ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ কম। এমনকি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনাতেও নতুন এডিপি ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম অর্থাৎ ১৪ হাজার কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে।
খসড়া এডিপি বিশ্লেষণে দেখা যায়, পরিবহণ, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, গৃহায়ন ও স্বাস্থ্য- এই পাঁচ খাতেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট এডিপির ৬৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাত—৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা (১৪ দশমিক ৮ শতাংশ), শিক্ষায় ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা (১২ দশমিক ৪২ শতাংশ), গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধায় ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা (৯ দশমিক ৯০ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা (৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ)।
খাতভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ যাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে- ৩৬ হাজার ৯৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ (৩২ হাজার ৩২৯ কোটি), বিদ্যুৎ বিভাগ (২০ হাজার ২৮৩ কোটি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (১৩ হাজার ৬২৫ কোটি), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (১২ হাজার ১৫৪ কোটি), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ (১১ হাজার ৬১৭ কোটি), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (১১ হাজার ৩৯৮ কোটি), নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় (৯ হাজার ৩৮৭ কোটি), পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় (৮ হাজার ৪৮৯ কোটি) এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় (৭ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা)। সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে সংসদবিষয়ক সচিবালয়ের জন্য—মাত্র ২০ হাজার টাকা।
নতুন অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ১৪৩টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৯৬৯টি, সমীক্ষা প্রকল্প ১৯টি, কারিগরি সহায়তার ৯৭টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের ৫৮টি প্রকল্প রয়েছে। পাশাপাশি আরও ৯৯০টি অনুমোদনহীন নতুন প্রকল্প রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৫৪টি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে, ২০০টি বৈদেশিক সহায়তায় এবং ৩৬টি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে।
এছাড়া, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৭৯টি প্রকল্প এবং জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অধীনে ২২৮টি প্রকল্পও নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "এডিপির আকার যেমন বড় বিষয়, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো এর বাস্তবায়ন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অর্থবছরের শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি থাকে না, বরং শেষ দিকে হঠাৎ ব্যয় বাড়ে। এটি উন্নয়নের জন্য কার্যকর নয়।"
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও বলেন, “উচ্চাভিলাষী নয়, বাস্তবভিত্তিক বাজেট তৈরির চেষ্টা চলছে। যাতে অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করে কার্যকর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।”
আগামী রোববারের এনইসি বৈঠকে এই খসড়ার অনুমোদনের পর চূড়ান্ত এডিপি ঘোষণা করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামোগত ও সামাজিক খাতে নতুন গতি আসবে বলেই আশা করা যায়।
বাংলাধারা/এসআর