ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট: সব ভোটকেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫, ১২:০১ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশের সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, যেসব ভোটকেন্দ্রে আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো সচল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। আর যেসব কেন্দ্রে ক্যামেরা নেই, সেখানে শুধু ভোটের দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ব্যয় সীমিত থাকবে বলেও মনে করছে কমিশন।

শুরুতে নির্বাচন ব্যয় বাড়ার আশঙ্কায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহারে আগ্রহী ছিল না ইসি। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) একাধিক রাজনৈতিক দল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি তোলে। কয়েকটি দল এ বিষয়ে লিখিত আবেদনও করে।

এরপর মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণে ইসি দেখতে পায়, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ফলে সেগুলো সচল রাখলে নতুন করে বড় ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না। আর যেসব কেন্দ্রে নেই, সেখানে অস্থায়ীভাবে ক্যামেরা বসানো সম্ভব। এসব বিবেচনায় নিয়েই কমিশন সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

সম্প্রতি ইসির সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সচিব এবং বিভাগীয় প্রধানদের বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্ব পায়। গত ২৭ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকেও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের আলোচনা হয়।

ইসি জানিয়েছে, এবার সারাদেশে ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি ভোটকক্ষ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৯। প্রাথমিকভাবে ১৪টি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রও চিহ্নিত করা হয়েছে।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ইসিকে জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে ৮ হাজার ২২৬টি ভোটকেন্দ্রকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ইসি এগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র’ হিসেবে বিবেচনা করছে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকলে ভোটারদের নিরাপত্তা যেমন বাড়বে, তেমনি যেকোনো অনিয়ম বা অপরাধের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

ইসি সূত্র জানায়, যেসব প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে, সেখানে বিদ্যমান সিসিটিভি সংযোগ সচল রাখতে বলা হয়েছে। আর যেসব কেন্দ্রে সিসিটিভি নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে অন্তত ভোটের দিনের জন্য সিসিটিভি বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেখানেও দ্রুত সংযোগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। তখন কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের মাধ্যমে সারাদেশের ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। তার আগের নির্বাচনগুলোতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার তেমন ছিল না।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “এবারের নির্বাচনে ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। যেসব কেন্দ্রে সিসিটিভি আছে, সেগুলো সচল রাখতে হবে। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।”

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিড মিনিস্ট্রি হিসেবে কাজ করবে। আরেক কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ভোটের দিন সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।

গত ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি ঘোষণা দেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একই দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ৯ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ চলবে।

বাংলাধারা/এসআর