ঢাকা, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২

হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ পেছাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৫, ০২:৪৮ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল (টিএফআই সেল)-এ গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ পিছিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করা হয়েছে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এদিন সকালে ঢাকার সেনানিবাসে অবস্থিত বিশেষ কারাগার থেকে এ মামলায় গ্রেপ্তার ১০ জন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। 

তারা হলেন-র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র‍্যাব গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

শুনানিকালে তোফায়েল, কামরুল ও মশিউর রহমানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী আদেশের জন্য আরও সময় চেয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল দুই দিন পিছিয়ে ২৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।

তবে আসামিপক্ষের এ আবেদনে আপত্তি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন,
“আসামিপক্ষ বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যেই বারবার এ ধরনের আবেদন করছে এবং আদালতকে বিব্রত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”

এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জন আসামি রয়েছেন। পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 

আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ এবং র‍্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ এবং সাতজনের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন আইনজীবী তাবারক হোসেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম, তিনজনের পক্ষে সুজাদ মিয়া এবং শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী মো. আমির হোসেন শুনানিতে অংশ নেন। তারা প্রত্যেকেই পৃথক পৃথক যুক্তি তুলে ধরে তাদের মক্কেলদের অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরুর আবেদন জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদেশের জন্য রোববার দিন ধার্য করা হলেও পরে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে ৩ ডিসেম্বর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন। তিনি শুনানিতে টিএফআই সেলে সংঘটিত নির্যাতন ও গুমের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলেন,
“গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট একটি নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কখনো গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হতো, আবার অনেককে বছরের পর বছর গুমে রেখে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেওয়া হতো।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৮ অক্টোবর এ মামলায় প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৭ জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আসামিদের হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা হাজির না হওয়ায় আদালত তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন।

বাংলাধারা/এসআর