দুই দিনে চার খুনের মামলায় জামিন, আড়ালে রাখা হলো তথ্য
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:৫৪ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ এবং তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্না এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দিনে চাঞ্চল্যকর চারটি খুনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে এই জামিনের তথ্য পুলিশ, প্রশাসন এমনকি গণমাধ্যমের কাছ থেকেও আড়ালে রাখতে নেওয়া হয় একের পর এক কৌশল। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আর গোপন থাকেনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ১০টি খুনসহ মোট ১৯টি মামলা। এর মধ্যে চট্টগ্রামে জোড়া খুন ও প্রকাশ্যে আলোচিত সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা হত্যাকাণ্ডও রয়েছে। তাঁর স্ত্রী তামান্নার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক খুনসহ মোট আটটি মামলা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট চান্দগাঁও থানার দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একই দিন পাঁচলাইশ থানার ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায়ও এই দম্পতিসহ তিনজন জামিন পান।
এর এক সপ্তাহ পর, ২২ সেপ্টেম্বর একই হাইকোর্ট বেঞ্চ পাঁচলাইশ থানার দোকান কর্মচারী মো. ফারুক হত্যা মামলায় সাজ্জাদ ও তামান্নাকে জামিন দেন। ওই দিনই পাঁচলাইশ থানার আফতাব উদ্দিন তাহসীন হত্যা মামলাতেও জামিন পান তারা।
চারটি মামলাতেই বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ সুমনের দ্বৈত বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।
১৫ ও ২২ সেপ্টেম্বর জামিন আদেশ দেওয়া হলেও এর কপি যথাক্রমে ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ অক্টোবর হাইকোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলীর স্বাক্ষরে প্রস্তুত হয়। তবে সেই জামিননামা চট্টগ্রাম আদালতে পৌঁছে গত ৮ ডিসেম্বর- প্রায় আড়াই মাস পর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাধারণত হাইকোর্ট থেকে জামিন হলে এক সপ্তাহের মধ্যেই জামিননামা কারাগারে পৌঁছে যায়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা হয়নি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে জামিননামা পাঠাতে বিলম্ব করা হয়।
সূত্র জানায়, হাইকোর্টে জামিন আবেদনের ক্ষেত্রে চারটি মামলাতেই তামান্নার নাম রাখা হয় এক নম্বরে—নারী হিসেবে সহানুভূতি পাওয়ার কৌশল হিসেবে। সাজ্জাদের নাম রাখা হয় দুই ও তিন নম্বরে, যাতে তাঁর শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয় আড়াল থাকে।
এ ছাড়া ভয়ংকর বা আলোচিত সন্ত্রাসীদের জামিন হলে সাধারণত রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজ আদালতে গিয়ে জামিন স্থগিত চায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি।
সাজ্জাদের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক জামিনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী চারটি মামলায় জামিন পেয়েছেন। জামিননামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে হাইকোর্ট থেকে কেন দেরিতে কাগজ এসেছে, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ বলেন, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলার জামিননামা এসেছে। তামান্নার চারটি মামলার জামিননামা পাওয়া গেছে। সাজ্জাদ বর্তমানে রাজশাহী এবং তামান্না ফেনী কারাগারে রয়েছেন। কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে। ওই হত্যাকাণ্ডের পর কারাগারে বসেই ফোনে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে সাজ্জাদের ভূমিকার অভিযোগ সামনে আসে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৪ নভেম্বর সাজ্জাদকে রাজশাহী এবং ১৮ নভেম্বর তামান্নাকে ফেনী জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকার বসুন্ধরা সিটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর সাজ্জাদ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বাবলাকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন তামান্না- এমন অভিযোগও রয়েছে। এর কিছুদিন পরই বাবলাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাংলাধারা/এসআর
