ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত নবীন সৈনিকেরা : বিজিবি ডিজি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

দেশের এক ইঞ্চি মাটিও হাতছাড়া হতে দেবে না নবীন সৈনিকেরা- এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “দেশ মাতৃকার অখণ্ডতা রক্ষায় নবীন সৈনিকেরা প্রয়োজনে তাদের জীবন উৎসর্গ করবে, কিন্তু দেশের মাটি অক্ষুন্ন রাখবে।”

বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বিজিবির ঐতিহ্যবাহী বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবির ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজিটিসিএন্ডসির কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামানসহ বিজিবি, সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে ৯টায় বিজিবি ডিজিকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তব্যের শুরুতেই বিজিবি মহাপরিচালক ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তৎকালীন ইপিআরের ৮১৭ জন বীর যোদ্ধাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হওয়া সকল ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, “সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিজিবি ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। মাদক, অস্ত্রসহ অন্যান্য চোরাচালান রোধ, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করে বিজিবি।”

নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, “মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা- এই চার মূলমন্ত্র বিজিবির ভিত্তি। শৃঙ্খলা সৈনিক জীবনের অলংকার। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যারা কখনো পিছপা হয় না, তারাই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা অর্জন করতে হবে। তাহলেই তোমরা পূর্বসূরীদের যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত হতে পারবে।”

নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান অবিস্মরণীয়। আজকের নবীন নারী সৈনিকরা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শপথ নিয়ে বাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে। তাদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা বিজিবির কর্মকাণ্ডে আরও গতিশীলতা আনবে।”

বিজিবি ডিজি নবীন সৈনিকদের কুচকাওয়াজের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “তোমাদের বৃহত্তর কর্মজীবনে কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। সীমান্তে দায়িত্ব পালনকালে তোমাদের সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার ওপরই বাহিনীর সুনাম ও গৌরব নির্ভর করবে।”

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে তিনি নবীন সৈনিকদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল এবং বিজিবির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন। এরপর ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৫৭৪ সাইফ মিয়া ও অন্যান্য সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বিজিবি মহাপরিচালক।

কুচকাওয়াজ শেষে বিজিবির প্রশিক্ষিত সৈনিকদের আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং সুসজ্জিত বাদকদলের ব্যান্ড ডিসপ্লে উপস্থিত অতিথিদের মুগ্ধ করে।

উল্লেখ্য, ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল গত ২৬ জানুয়ারি। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে ৬৫৮ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী- মোট ৬৯৪ জন রিক্রুট বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সৈনিক জীবনে পদার্পণ করলেন।


বাংলাধারা/এসআর