পাঠ্যবইয়ে পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় আকারে যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ০২, ২০২৫, ১০:১৮ রাত
ছবি: সংগৃহিত
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হচ্ছে সমকালীন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়- ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান। আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এটি সীমিত পরিসরের বদলে বিস্তৃত আকারে, পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। একইসঙ্গে ধারাবাহিকতা রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনৈতিক আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানগুলোকেও পাঠ্যক্রমে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের বয়স ও মানসিক পরিপক্বতা অনুযায়ী বিষয়বস্তু সাজানো হয়েছে।
কোন শ্রেণিতে কীভাবে আসবে
- ষষ্ঠ শ্রেণি: বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে “স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান” শিরোনামে বিষয়টি থাকবে।
- সপ্তম শ্রেণি: “বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও গণআন্দোলন” অধ্যায়ে জুলাই অভ্যুত্থান যুক্ত হবে।
- অষ্টম শ্রেণি: “বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যুত্থান” নামে পাঠ অন্তর্ভুক্ত হবে।
- নবম-দশম শ্রেণি: বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি অধ্যায় হিসেবে যোগ হবে। এখানে থাকবে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, সহিংসতার দিনগুলো, নিহতদের স্মৃতি এবং রাজনৈতিক পরিণতি।
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি: উচ্চমাধ্যমিকে বিষয়টি আসবে বিশ্লেষণধর্মী পাঠ আকারে। সাহিত্যপাঠ বইয়ে প্রবন্ধ হিসেবে এবং English for Today বইয়ে সমকালীন প্রবন্ধ আকারে যুক্ত হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যেমন বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড় ঘোরানো সংগ্রাম, তেমনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানও তারই ধারাবাহিকতায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি শুধু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নয়, বরং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে তরুণদের সাহসিকতার প্রতীক।
তার মতে, এ উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীরা কেবল ইতিহাস জানবেই না, বরং নাগরিক চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সমাজ পরিবর্তনের অনুপ্রেরণাও লাভ করবে।
আগের সংস্করণে জুলাই অভ্যুত্থান সীমিত পরিসরে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এনসিটিবি মনে করছে, এতে আন্দোলনের পূর্ণ প্রেক্ষাপট উঠে আসেনি। এবার আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাস, পূর্ববর্তী গণঅভ্যুত্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী গণতান্ত্রিক যাত্রাপথকে একসূত্রে উপস্থাপন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসি) জানিয়েছে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের পাশাপাশি ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহও অন্তর্ভুক্ত হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতা-উত্তর গণআন্দোলনের ধারাবাহিক চিত্র সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবে।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সমন্বয়কেরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধ যেমন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, তেমনি জুলাই অভ্যুত্থানও গণতন্ত্র ও সামাজিক পরিবর্তনের নতুন পাঠ হয়ে থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মো. আব্দুল মুনঈম বলেন, পলাশী থেকে শুরু করে ফকির বিদ্রোহ, তিতুমীর, সিপাহী বিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা নব্বইয়ের গণআন্দোলন- সবই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশের ধারাবাহিক ইতিহাস। জুলাই অভ্যুত্থানও তারই অংশ।
সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম বলেন, এই অধ্যায় পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হওয়া মানে আগামী প্রজন্মকে সাহস, আত্মত্যাগ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করানো।
তবে শুধু পাঠ্যবই নয়, বরং গবেষণা, প্রামাণ্যচিত্র, নাটক, আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণমূলক আয়োজনের মাধ্যমেও এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতারা।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক বাঁক। এই অধ্যায় এখন থেকে শুধু একটি ঘটনা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে একটি পূর্ণাঙ্গ ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে স্থান পাচ্ছে। এতে তরুণ প্রজন্ম অতীত জানার পাশাপাশি নাগরিক চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণের শিক্ষা লাভ করবে।
বাংলাধারা/এসআর
