ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভৈরব জেলা ঘোষণার দাবিতে রেলপথ অবরোধ, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে আহত ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ০৩:২৩ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

‘জেলা জেলা জেলা চাই, ভৈরব জেলা চাই’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, কিশোরগঞ্জ নো মোর’, এমন স্লোগানে আজ সোমবার সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা। জেলা ঘোষণার দাবিতে জনতার বিক্ষোভে অবরুদ্ধ হয় রেলপথ, থেমে যায় নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষ এই রেল অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।

সকাল গড়িয়ে গেলে যাত্রীদের দুর্ভোগ বিবেচনায় স্থানীয় নেতারা ও রেলওয়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে ট্রেন চালু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সে সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। এতে আশুগঞ্জ থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম (৪৫)সহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

রেলপথ অবরোধের প্রভাবে একে একে বিপর্যস্ত হয় ট্রেনের সময়সূচি। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস দীর্ঘক্ষণ ভৈরবে আটকে থাকে, চট্টগ্রামগামী একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে যায় নরসিংদীর দৌলতকান্দিতে। তিতাস এক্সপ্রেস থেমে থাকে মেথিকান্দা স্টেশনে, কর্ণফুলী ট্রেন খানাবাড়ি স্টেশনে, আর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী চট্টলা ট্রেন থেমে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তালশহর স্টেশনে।

ঘণ্টারও বেশি সময় কর্ণফুলী ট্রেন আটকে থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেউ কেউ ট্রেন থেকে নেমে সড়কে প্রতিবাদও জানান।

ভৈরবে আন্দোলনের সূত্রপাত ১১ অক্টোবর থেকে, যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত আসে। এর পর থেকেই ‘ভৈরব জেলা চাই’ দাবিতে একের পর এক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয়রা।

আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন ভৈরব বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন, ছাত্র শিবির, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আজকের রেল অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি হাজী মো. শাহিন, ছাত্রনেতা মোহাম্মদ জাহিদুল, মওলানা শাহরিয়ার, গোলাম মহিউদ্দিন ও মুহাম্মদ জুনায়েদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, “১৫ দিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের পরও সরকার কোনো সাড়া দেয়নি। তাই আজ রেলপথ অবরোধ করা হয়েছে। আগামীকাল নৌপথ অবরোধ করা হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভৈরবকে জেলা ঘোষণা না করলে সড়ক, রেল ও নৌপথ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।”

তবে ছাত্রনেতা শাহরিয়ার পাথর নিক্ষেপের ঘটনার দায় অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের আন্দোলনকে দুর্বল করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা কর্মসূচি শেষে যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”

রেলওয়ে থানার ওসি সাইদ আহমেদ বলেন, “স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তে তদন্ত চলছে।”

ভৈরব স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ ইউসুফ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ট্রেন অবরোধ ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অনেকেই মন্তব্য করেন, “দাবি ন্যায্য হতে পারে, কিন্তু সহিংসতা কোনো সমাধান নয়।”

বাংলাধারা/এসআর