টঙ্গীর খতিব মহিবুল্লাহর ‘অপহরণ নাটক’: তদন্তে মিলল মিথ্যার জাল
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ১১:৩৭ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার টিএনটি বাজার জামে মসজিদের খতিব আলহাজ ক্বারি মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজীর নিখোঁজ ও ‘অপহরণের’ গল্প এখন তদন্তে নাটক হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ, চিকিৎসক এবং সিসিটিভি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে একাধিক অসংগতি ও মিথ্যা তথ্যের জাল। পুরো ঘটনাটি নিজের তৈরি নাটক বলে স্বীকারও করেছেন এই খতিব।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থানাধীন হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকল বাঁধা অবস্থায় স্থানীয়রা মহিবুল্লাহকে দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রথমে তিনি দাবি করেন, অজ্ঞাত কয়েকজন তাকে টঙ্গী থেকে অপহরণ করে এখানে ফেলে গেছে।
তবে তদন্তে চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আগের দিন সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন এলাকায় তিনি একাই দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন। সেখানে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়নি। ফুটেজ বিশ্লেষণ ও মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ে পুলিশ জানতে পারে, তিনি নিজেই সিরাজগঞ্জ হয়ে পঞ্চগড় পর্যন্ত যান।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন বলেন, “তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কেবল ব্যথানাশক দেওয়া হয়েছিল।” এ থেকেই সন্দেহ বাড়ে যে, পুরো ঘটনাই সাজানো।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খতিব নিজেই নিজের পায়ে শিকল বেঁধেছিলেন—সবকিছু ছিল তার পরিকল্পিত নাটকের অংশ। কেন তিনি এমন কাজ করলেন, তা এখনো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে মহিবুল্লাহকে টঙ্গী পূর্ব থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেন যে ঘটনাটি তার নিজের সাজানো। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
অন্যদিকে, আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামিও এ ঘটনার নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি চারটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানান, “সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মহিবুল্লাহকে ফিলিং স্টেশনের সামনে দিয়ে দ্রুত হেঁটে যেতে দেখা যায়। অপহরণের কোনো দৃশ্য নেই।”
তিনি আরও জানান, “৬টা ৫৪ মিনিটে তিনি এলাকা থেকে রওনা হয়ে দুই কিলোমিটার দূরের ফিলিং স্টেশনে পৌঁছান ৭টা ১৮ মিনিটে। স্টেশনের ম্যানেজার সোলেইমানও নিশ্চিত করেছেন, ‘আমাদের সামনে থেকে হুজুরকে কেউ অপহরণ করেনি।’ তিন দফায় পুলিশের বিভিন্ন শাখা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে একই তথ্য পেয়েছে।”
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গী পূর্ব থানার টিএনটি বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হন মুফতি মহিবুল্লাহ। সন্ধ্যার পর তার নিখোঁজের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ধর্মপ্রাণ মানুষ, আলেম-ওলামা ও স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়। পরদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে ‘অপহৃত’ অবস্থায় তার উদ্ধার খবর প্রকাশ পায়।
কিন্তু তদন্তে একের পর এক তথ্য উন্মোচন হওয়ার পর এখন নিশ্চিত,টঙ্গীর খতিবের ‘অপহরণ’ আসলে ছিল এক নিখুঁত সাজানো নাটক।
বাংলাধারা/এসআর
