সংস্কার চিত্র (১)
স্বাস্থ্য খাতে ৩৩ সুপারিশের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র ৬টি
প্রকাশিত: নভেম্বর ০১, ২০২৫, ১২:০৩ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
জনমুখী ও কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন চার শতাধিক সুপারিশ করেছিল। এর মধ্যে ৩৩টি ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ প্রস্তাব এ বছরের মধ্যেই কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু দুই মাসেরও বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ছয়টি। ফলে বাকি ২৭টি সুপারিশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান জানান, তাৎক্ষণিকভাবে যা বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল, তা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। কিছু বিষয় সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা এবং আইন সংশোধনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী দেড় মাসের মধ্যেই বাস্তবায়নের প্রভাব দৃশ্যমান হবে, এবং অবশিষ্ট সুপারিশগুলোর কাজও সম্পন্ন করা হবে।
জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের এই সংস্কার কমিশন গত ৫ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ১৩ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করে সুপারিশগুলো স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়। স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ৩৩টি প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য খাতের সব কেনাকাটায় ই-জিপি চালু করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও ওষুধ প্রেসক্রাইব এবং ওষুধ কোম্পানির প্যাডে প্রেসক্রিপশন লেখা বন্ধ করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দ্রুততা আনতে সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ বেতন কাঠামো না হলেও ইন্টার্ন চিকিৎসক ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের বেতন হালনাগাদ করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে একীভূত করেছে মন্ত্রণালয়।
আগামী দেড় মাসের মধ্যে আরও ১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই বিষয়ে চলতি মাসেই একটি বৈঠকে বসবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, যেখানে বাস্তবায়িত পদক্ষেপের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
বাস্তবায়নধীন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য আইন সংস্কার, রোগীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি, হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ, জাতীয় আবশ্যক ডায়াগনস্টিক তালিকা তৈরি ও খরচ নির্ধারণ, জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, ই-প্রেসক্রিপশন চালু ও প্রেসক্রিপশন অডিট কার্যকর করা এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ইউনিটকে শক্তিশালী করা।
এছাড়া বাংলাদেশ হেলথ কমিশন গঠন, আবশ্যক ওষুধ বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ, স্বাস্থ্য তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, স্বাস্থ্যসেবা সচিবালয় স্থাপন, সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা, সবার জন্য স্বতন্ত্র হেলথ আইডি চালু, বাধ্যতামূলক রেফারেল সিস্টেম কার্যকর করা এবং নগর এলাকায় ১৭০টি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের কাজও পরিকল্পনায় রয়েছে।
সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারি হাসপাতালের সেবার মান বাড়বে, ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে। সরকার চাইলে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো আরও দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, অধিকাংশ সুপারিশ বাস্তবায়নে আইন প্রণয়ন বা সংশোধন এবং মন্ত্রণালয়ের নীতিগত নির্দেশনা প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তও জরুরি। এসব বিষয়ে সমন্বয় করে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, সরকার শুধু অবকাঠামো নয়, মানবসম্পদ, প্রশাসন, জবাবদিহি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যখাতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর।
বাংলাধারা/এসআর
