যথাসময়ে নির্বাচন হবে কি না-জনমনে প্রশ্ন, সংঘাত-অপপ্রচারে বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপচেষ্টা চলছে: তারেক রহমান
প্রকাশিত: নভেম্বর ০৩, ২০২৫, ১১:৪১ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে কি না, এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিযোগ করেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে দেশে সংঘাত, অপপ্রচার ও নানা অপকৌশল চালানো হচ্ছে।
রোববার (২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে প্রবাসে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য গ্রহণের কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক সময়ে নির্বাচন হবে কি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের মতো অবস্থা যেন তৈরি না হয়, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কৌশল ও অপকৌশলের পার্থক্য না বুঝলে, অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘাত, অপপ্রচার ও অপকৌশল চলছে। মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা যাবে না। প্রতিপক্ষ যেন সেই সুযোগ নিতে না পারে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাঁকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
তিনি জানান, খুব শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, “প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। তবে সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদেরও বিএনপি সমর্থন দেবে।”
তারেক রহমান বলেন, “দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া জরুরি। দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, “পতিত স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল। আজও বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল চলছে। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সংশয় তৈরি হয়েছে, তা গণতন্ত্রের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে। বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে ছাড় দিয়ে এসেছে, কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন শর্ত আরোপ করে গণতন্ত্রের পথকে জটিল করা হচ্ছে। এর পরিণতি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৩ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হবে। পরে সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক হবে। লন্ডন থেকে দুটি বৈঠকেই ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন তারেক রহমান। গত কয়েক মাস ধরে তিনশ আসনে মাঠ জরিপ ও সাংগঠনিক মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়েছে।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে জরুরি ভিত্তিতে লন্ডনে ডেকেছেন তারেক রহমান। রোববার সকালে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। দলীয় একটি অংশের ধারণা, জুলাই সনদ ও নির্বাচনী জোটের কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতেই তাঁকে ডাকা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সঞ্চালনা করেন আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান শেষে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “ধানের শীষের বিজয় মানে দেশের বিজয়, গণতন্ত্রের বিজয়। তাই আপনাদের স্লোগান হোক,‘ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গরব মিলে-মিশে।’”
বাংলাধারা/এসআর
