অনৈক্য’ ঘোচাতে তৎপর সরকার, আজ উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা
প্রকাশিত: নভেম্বর ০৩, ২০২৫, ১২:০৫ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
জুলাই সনদ, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন,এই তিন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সকাল ১১টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন তিনি। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দলগুলোর মধ্যে তৈরি হওয়া অনৈক্য দূর করে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এই বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়েছে।
সভায় গণভোটের তারিখ নির্ধারণ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও জানা গেছে। সাধারণত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকে, কিন্তু আজকের বৈঠকে কোনো নির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি রাখা হয়নি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকটি মূলত রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা ও অনৈক্য নিরসনের উদ্যোগ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরের মধ্যে সরকারের মধ্যস্থতায় বৈঠকও হয়েছে। সেই বৈঠককে সামনে রেখে আজকের সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজন নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।
গণভোটের সময়সূচি নিয়েই এখন মূল বিরোধ। বিএনপি চায় জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি জানিয়েছে। এই মতভেদে সরকারও কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হলো ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্ধারিত সময়েই অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায় নিশ্চিত করা।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। গণভোটের তারিখ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও তিনি জানান। তার ভাষায়, “গণভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা; আমরা শুধু সহযোগিতা করব।”
এর আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেয়, যেখানে নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়। তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে, চুক্তিতে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের বাইরে কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যা তারা ‘প্রতারণা’ বলে মনে করছে।
একইসঙ্গে আরপিও সংশোধন নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে জোটবদ্ধ দলগুলোকেও নিজ নিজ প্রতীকে ভোট করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অভিযোগ করেছে, এ সংশোধন ছোট দলগুলোকে বিপাকে ফেলবে এবং কার্যত বড় দলের সুবিধা বাড়াবে।
আরপিও সংশোধনের প্রতিবাদে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে। বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, “এই সংশোধনী অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা আগের বিধান বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছি।”
এদিকে আজ দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের করবী হলে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বৈধ পাসধারী সাংবাদিকরাই সেখানে অংশ নিতে পারবেন বলে কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।
সরকারি সূত্র বলছে, আজকের বিশেষ সভা থেকে রাজনৈতিক অনৈক্য ঘোচানোর উদ্যোগ ও নির্বাচন-গণভোট নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আসতে পারে। সরকারের আশাবাদ, সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।
বাংলাধারা/এসআর
