আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: এক বছরে চারবার আইনে বড় পরিবর্তন
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ১১:৪৬ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের এক বছরের মধ্যেই চার দফা সংশোধন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর গত বছর ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল নতুন করে গঠন করা হয়। এর আগে ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের পর প্রতিষ্ঠানটি নতুন মাত্রায় আলোচনায় আসে।
পুনর্গঠনের পর প্রথম সংশোধনী আনা হয় গত বছরের ২৪ নভেম্বর। সংশোধনের আগে ট্রাইব্যুনাল শুধুমাত্র দেশের ভেতরে সংঘটিত অপরাধ আমলে নিতে পারত। নতুন সংশোধনীতে দেশের বাইরে বসে সংঘটিত অপরাধও বিচারযোগ্য করা হয়। ওই সংশোধনের পর ভারতে বসে ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
একই সংশোধনীতে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে রয়েছে-যে কোনো দেশের নাগরিক বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে তার বিচার সম্ভব হবে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার বা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধেও এ আইনে মামলা করা যাবে। আক্রমণ, নিপীড়ন, গুম, যৌনদাসী, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি, জোরপূর্বক গর্ভধারণ ও বন্ধ্যাকরণসহ গুরুতর নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
তদন্ত কর্মকর্তাকে তল্লাশি, জব্দ বা নথিপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়। আসামিপক্ষও ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বিচার চলাকালীন অতিরিক্ত সাক্ষী বা নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারবে। শুনানির অডিও-ভিডিও রেকর্ড, প্রদর্শন কিংবা ভার্চুয়াল শুনানির সুযোগও যোগ করা হয়।
এই সংশোধনীর পর শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা সংশোধনী জারি হয়,‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’। এতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময়সীমা ছয় সপ্তাহ থেকে কমিয়ে তিন সপ্তাহ করা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দিতে অভিযুক্তের সম্পদ জব্দ, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ আরও কিছু ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালকে দেওয়া হয়।
এই পরিবর্তনের পর শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ আসে আদালতের রায়ে।
তৃতীয় সংশোধনী আসে চলতি বছরের ১০ মে। এতে রাজনৈতিক দল, সংশ্লিষ্ট সংগঠন বা ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে বিচারিক আওতায় আনার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সবশেষ ৬ অক্টোবর চতুর্থ সংশোধনী অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়। এতে নতুন ধারা ২০(সি) যোগ করে বলা হয়-ট্রাইব্যুনালে কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গৃহীত হলে তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধি হয়ে থাকলে পদ হারাবেন। এর ফলে শেখ হাসিনার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথও আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
নতুন ধারায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন, চেয়ারম্যান, মেয়র, প্রশাসক বা সরকারি নিয়োগেও অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। তবে খালাস বা অব্যাহতি পেলে এসব বিধান প্রযোজ্য হবে না।
গেজেট প্রকাশ হয় ৬ অক্টোবর, তবে সংশোধনীর কার্যকারিতা অতীতেও প্রযোজ্য বলে গণ্য করা হয়েছে, যা আইনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চালু করতে ১৯৭৩ সালের আইনের ভিত্তিতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই আইনে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুটি সংশোধনী আনা হয়েছিল।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই টানা চার দফা সংশোধন বিচারব্যবস্থা, রাজনীতি ও প্রশাসনে এ ধারাবাহিক পরিবর্তনকে বহু বিশ্লেষক বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
বাংলাধারা/এসআর
