ভূমিকম্পেও নীরব পটুয়াখালীর সিসমিক যন্ত্র: ১২ বছর অচল
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ১১:২৫ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের একমাত্র ব্যবস্থা হিসেবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত যন্ত্রটি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অচল পড়ে আছে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সময় যন্ত্রটি কোনো সতর্ক সংকেত তো দেয়ইনি, বরং কম্পনের ন্যূনতম রেকর্ডও ধরে রাখতে পারেনি। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত এই যন্ত্রটি এখন শুধু একটি অচল হার্ডওয়্যারে পরিণত হয়েছে, যার অস্তিত্বের কথা অনেক শিক্ষার্থীই জানেন না।
সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের হর্টিকালচার বিভাগের সামনে স্থাপন করা সিমেন্টের একটি ছোট ছাউনির নিচে যন্ত্রটির অবস্থান দেখা যায়। মাটির নিচে থাকা সেন্সর প্লেটটি এখনো একইভাবে থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় কন্ট্রোল ইউনিট বা ডিসপ্লের অবস্থা দেখা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য- যন্ত্রটির কন্ট্রোল ইউনিটসহ পুরো সিস্টেমই সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে আছে, দীর্ঘদিন কোনো ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ বা আপডেট না হওয়ায় এটি আর কার্যকর নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের সমন্বয়ে দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এই যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। তখন ধারণা ছিল, ভবিষ্যতে উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি বা নিম্নগমন এবং ভূমিকম্পের মাত্রা পর্যবেক্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থাপনের প্রথম বছর এটি সচল থাকলেও পরে ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এস. এম. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের আগাম সংকেত দেওয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কেবল সম্ভাব্য ঝুঁকি অনুমান করা সম্ভব। তিনি বলেন, পটুয়াখালীর যন্ত্রটি পুরনো ও এনালগ প্রযুক্তিভিত্তিক, যার মাধ্যমে আধুনিক তথ্য সংগ্রহ বা রিয়েল-টাইম ডাটা পাওয়া সম্ভব নয়। তবে তিনি মনে করেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা একত্রে কাজ করলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নিজস্ব আধুনিক সিসমিক প্রযুক্তি তৈরি করতে পারে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হেমায়েত জাহান বলেন, অনেকেই ভুল করে একে সিসমোগ্রাফ মনে করেন, বাস্তবে এটি ভূমির ওঠানামা পর্যবেক্ষণের একটি মেশিন। এর মাধ্যমে ভূ-কম্পনও শনাক্ত করা যায়, কিন্তু যন্ত্রটি বহু বছর ধরে অচল থাকায় এখন তা আর কোনো কাজেই আসে না। তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় তারা ইতোমধ্যে একটি আধুনিক যন্ত্র স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার আশা করছেন।
উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দাবি আরও সরল- যত দ্রুত সম্ভব একটি অত্যাধুনিক ভূকম্পন মাপার যন্ত্র স্থাপন করা হোক। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা এ অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, কার্যকর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকলে ঝুঁকি মোকাবিলা সহজ হবে এবং ভবিষ্যতে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা সম্ভব হবে।
বাংলাধারা/এসআর
