ঢাকা, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ০৩, ২০২৫, ০৭:১৫ বিকাল  

ছবি: সংগৃহিত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। 

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) মিরপুর সেনানিবাসে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি) ২০২৫-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও জাতি গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়। দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আপনারা যে ত্যাগ ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন, তা দৃষ্টান্তমূলক।” তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মহামারির মতো সংকটে জনগণের কল্যাণে তাদের অব্যাহত ত্যাগ ও প্রস্তুতি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

ড. ইউনূস বাহিনীর আন্তর্জাতিক অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধি পেয়েছে।” অনুষ্ঠানে দেশের সকল নাগরিককে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় প্রার্থনা করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী যেন সত্যিই একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। ভোটগ্রহণ অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা এই মুহূর্তকে দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের একটি ঐতিহাসিক অংশ হিসেবে মনে রাখবেন।”

সমাপনী অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস। সেই বীরদের স্মরণ করা আমাদের দায়িত্ব। এছাড়া সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আত্মত্যাগও আমাদের স্মরণে থাকবে।”

প্রধান উপদেষ্টা নবস্নাতক কর্মকর্তা ও অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আজকের গ্র্যাজুয়েশন আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের ফল। এখন আপনি উচ্চতর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত, যা জাতীয় নিরাপত্তা, নীতিনির্ধারণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

ড. ইউনূস বলেন, “ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এমন নেতৃত্ব গড়ে তোলে, যারা জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দক্ষতা ও নীতি প্রণয়নে সক্ষম। আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স কৌশলগত ও অপারেশনাল স্তরে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করে এবং বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যেমন সাইবার হুমকি, জলবায়ু পরিবর্তন ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক জ্ঞান দেয়।”

বিদেশি গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বোঝাপড়া আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের অভিজ্ঞতা আপনার নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা প্রচারে সহায়ক হবে।”

উল্লেখ্য, ড. ইউনূস ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের অবদান ও এর লক্ষ্যকেও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যত নেতৃত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিদেশি কর্মকর্তাসহ কোর্সটি চিন্তাভাবনা বিনিময় এবং বোঝাপড়া সৃষ্টির জন্যও অসাধারণ সুযোগ প্রদান করে।”

প্রধান উপদেষ্টা ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের মূলমন্ত্র ‘সুরক্ষা থেকে জ্ঞান’ বজায় রাখবে এবং এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জটিলতা মোকাবিলায় সহায়ক হবে।”

বাংলাধারা/এসআর