ঢাকা, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২

‘হাদি তুমি আমাদের বুকের মধ্যে আছো’,জানাজায় আবেগঘন বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৫, ০৪:২১ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের মধ্যে আছো। বাংলাদেশ যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন তুমি আমাদের মধ্যেই থাকবে।”

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জানাজাস্থলে উপস্থিত মানুষের ঢল ও দেশজুড়ে শোকের আবহের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই মুহূর্তে শুধু ঢাকাই নয়, সারা বাংলাদেশ, এমনকি দেশের বাইরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও হাদির কথা জানতে তাকিয়ে আছেন।

তিনি বলেন, “আজ আমরা এখানে হাদিকে বিদায় দিতে আসিনি। আমরা এসেছি তার কাছে ওয়াদা করতে। সে যে আদর্শ, যে কথা বলে গেছে, সেগুলো পূরণ করার ওয়াদা করতেই আমরা একত্র হয়েছি। এই ওয়াদা শুধু আমাদের নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাংলাদেশের মানুষ তা বহন করবে।”

হাদির মানবিকতা, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, “মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা, বিনয়ী আচরণ এবং রাজনীতিকে দেখার ভঙ্গি আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। এই মূল্যবোধ যেন আমাদের চিন্তা ও কাজে সবসময় জাগ্রত থাকে, সেটাই আমাদের অঙ্গীকার।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাদি জাতির কানে এমন এক মন্ত্র দিয়ে গেছেন, যা কোনোদিন বিস্মৃত হবে না। “‘বল বীর-চির উন্নত মম শীর’,এই মন্ত্র তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন। এই মন্ত্র আমাদের শিখিয়েছে মাথা উঁচু করে বাঁচতে, কারও কাছে মাথা নত না করতে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, এই মন্ত্র ততদিন জাতির সঙ্গে যুক্ত থাকবে।”

নির্বাচনী রাজনীতিতে হাদির ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে হাদি আমাদের শিখিয়ে গেছে কীভাবে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে রাজনীতি করতে হয়, কীভাবে বিনয়ের সঙ্গে মানুষের কাছে যেতে হয়, কীভাবে নিজের কথা তুলে ধরতে হয়। এই শিক্ষাই আমরা গ্রহণ করেছি এবং বাস্তবায়ন করতে চাই।”

আবেগঘন বক্তব্যের শেষাংশে ড. ইউনূস বলেন, “হাদি তুমি হারিয়ে যাবে না। কেউ তোমাকে ভুলতে পারবে না। আমরা আজ তোমাকে আল্লাহর হাতে আমানত রেখে দিলাম। তোমার কথা স্মরণে রেখেই আমরা জাতির অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাব, এই ওয়াদাই আজ করলাম।”

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেলে আসা সন্ত্রাসীর গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। ছয় দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়।

ওসমান হাদি ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক। ইনসাফভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গড়ে তোলেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

বাংলাধারা/এসআর