অতিরিক্ত কফি নারীদের জন্য লুকানো স্বাস্থ্যঝুঁকি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ১১:০৪ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
সকালের শুরু থেকে রাতের শেষ পর্যন্ত অনেকের দিন যেন অসম্পূর্ণ কফির কাপ ছাড়া। ঘুম ভাঙাতে, কাজের ক্লান্তি কাটাতে কিংবা মনোযোগ বাড়াতে, সবক্ষেত্রেই কফি এখন নিত্যসঙ্গী। কিন্তু চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, এই অভ্যাস যতটা আরামদায়ক, ততটাই বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষত নারীদের জন্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত কফি পান নারীদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করা, অনিদ্রা, হজমের গোলযোগ এবং মানসিক উদ্বেগ বাড়ানোর অন্যতম কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফির প্রধান উপাদান ক্যাফেইন শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যা সাময়িকভাবে চাঙ্গাভাব আনলেও অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালীতে ব্যাঘাত ঘটায়। নারীদেহে হরমোনের ওঠানামা স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়- ঋতুচক্র, গর্ভাবস্থা কিংবা মেনোপজের সময় এ ভারসাম্য আরও নাজুক হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে হরমোনের সুষমতা নষ্ট করে নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে।
অনিদ্রা ও মানসিক অস্থিরতা
‘পাবমেড সেন্ট্রাল’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে, ফলে অনিদ্রা ও উদ্বেগ বাড়ে। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন তিন কাপের বেশি কফি পান করেন, তাদের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত ও মানসিক অস্থিরতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। চিকিৎসকদের পরামর্শ, ঘুমের সমস্যা বেড়ে গেলে অন্তত দুই সপ্তাহ কফি পান বন্ধ রেখে পরিবর্তন লক্ষ্য করা উচিত।
হজমের গোলযোগ ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স
কফি নিজেই একটি অ্যাসিডিক পানীয়। তাই যারা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে ভোগেন, তাদের জন্য এটি আরও সমস্যা বাড়ায়। বিশেষ করে খালি পেটে কফি পান করলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বদহজম, পেটফাঁপা এমনকি ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
রক্তাল্পতা ও হাড়ক্ষয়ের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে আয়রন ও ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। ফলে নিয়মিত কফি পানকারীদের মধ্যে রক্তাল্পতা এবং হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যেসব নারী বয়সে প্রবীণ বা ইতিমধ্যে হাড়ক্ষয়ে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। দীর্ঘমেয়াদে এটি অস্টিয়োপোরোসিস বা হাড়ভাঙার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দিতে পারে।
পরামর্শ কী বলছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিমিত কফি পান ক্ষতিকর নয়, বরং মুড উন্নত করা, বিপাকক্রিয়া সক্রিয় রাখা বা হালকা ক্লান্তি দূর করার ক্ষেত্রে এটি উপকারী হতে পারে। তবে প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপের বেশি কফি না খাওয়াই ভালো। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান, পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখলে শরীর ও মনের ভারসাম্যও ঠিক থাকবে।
চিকিৎসকদের ভাষায়, “কফি হতে পারে ভালো সঙ্গী, কিন্তু অতিরিক্ত নির্ভরতা সেটিকে শত্রুতায় পরিণত করতে পারে।” তাই পরিমিত কফি, হোক সেটিই স্বাস্থ্যকর জীবনের সঠিক কৌশল।
বাংলাধারা/এসআর
