আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ: কী বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে ?
প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ০৯:৫৮ রাত

ছবি: সংগৃহিত
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১২ মে) বিকালে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারির কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে দলটি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও সাধারণ জনগণের ওপর ধারাবাহিকভাবে সহিংসতা, গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে যে বর্বরতা চালানো হয়, তা আন্তর্জাতিক মহলেও নিন্দিত হয়েছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই সময়কালে সংঘটিত গুম, পুড়িয়ে হত্যা, বেআইনি আটক, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
সরকারি নথি অনুযায়ী, মামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, কারণ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা মামলার সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে দলটির পলাতক নেতাদের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় উসকানিমূলক বক্তব্য, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতি ও সহিংসতার পরিকল্পনা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
সরকার মনে করে, ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮(১) অনুযায়ী দলটি এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো কার্যত সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো আচরণ করছে। ফলে আইন অনুযায়ী বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন।
কী কী নিষিদ্ধ?
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী-
- আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল, সম্মেলন আয়োজন করা যাবে না।
- প্রচারপত্র, পোস্টার, লিফলেট ও যেকোনো ধরনের প্রচারণা বন্ধ থাকবে।
- প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের পক্ষে কোনো বক্তব্য, প্রচার, পোস্ট দেওয়া যাবে না।
গত ১০ মে শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এই নিষেধাজ্ঞার নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান।
তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নৃশংস দমন-পীড়নের দায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুরক্ষার অংশ হিসেবেই বিবেচিত।”
বাংলাধারা/এসআর