ঢাকা, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিল্পী সমিতির নির্বাচন এখন হাসির খোরাক শাকিল খান

বিনোদন ডেস্ক:

 প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৫, ০৪:০৪ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিল খান, যিনি এক সময়ের সুপারহিট সিনেমার নায়ক, আজ চলচ্চিত্র থেকে অনেক দূরে। ১৯৯৪ সালে ঢাকাই সিনেমায় পা রাখা এই অভিনেতার প্রথম ছবি ‘আমার ঘর এই বেহেশত’ মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে। পরবর্তী সময়ে ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘তুমি আমার স্বপ্ন’, *‘প্রেমের বাধন’*সহ একের পর এক সফল ছবি উপহার দেন দর্শকদের। তবে ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে থাকা অবস্থায় হঠাৎই পর্দা থেকে হারিয়ে যান তিনি।

সম্প্রতি কালের কণ্ঠ-এর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় শাকিল খান কথা বলেছেন তাঁর ক্যারিয়ার, শিল্পী সমিতি, সমসাময়িক চলচ্চিত্র, এমনকি নিজের ব্যক্তিজীবন নিয়েও।

চলচ্চিত্র ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে শাকিল খান স্পষ্টভাবে বলেন,

“আমি যখন লাখ লাখ টাকা আয় করতাম, তখনও অশ্লীলতার ঢেউ আসতে শুরু করেছিল। আমি সেই স্রোতে গা ভাসাতে চাইনি। ভেবেছি, সমাজে কীভাবে মুখ দেখাব? একদিন আমার সন্তানরা যদি প্রশ্ন করে, ‘তুমি এসব ছবিতে কাজ করলে কেন?’ আমি কী উত্তর দেব? তাই ক্যারিয়ারের সোনালি সময়ে নিজেই বিদায় নিয়েছি।”

শিল্পী সমিতির কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই অভিনেতা বলেন, “এখনকার শিল্পী সমিতির নির্বাচন একটা ফালতু ব্যাপার হয়ে গেছে। এটা শিল্পীদের হাসির পাত্রে পরিণত করেছে। দুইটা সিনেমা করে কেউ নেতা সেজে বসে আছে, যাদের আমরা চেনিই না। কদিন আগে নাকি ফুটবল ম্যাচে সুপারস্টাররা অংশ নিয়েছে, আমি তো কাউকেই চিনি না!”

তিনি আরও বলেন, “রুবেল ভাই সেখানে আছেন, তিনি চাইলে প্রতিষ্ঠানটা ঠিক করতে পারেন, কিন্তু করছেন না। ফলে সমিতি এখন অথর্ব অবস্থায় আছে। আমার মতে, এমন নির্বাচনের কোনো দরকারই নেই।”

বর্তমানের ‘সুপারস্টার’ সংস্কৃতির সমালোচনায় শাকিল খান বলেন, “এখন তো সবাই নিজেকে সুপারস্টার দাবি করে। অথচ ১৯৯৮ সালে এক ঈদে আমার ১৬টা সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। ‘এই মন তোমাকে দিলাম’ ছিল সুপার ডুপার হিট। তবুও আমি কখনো নিজেকে সুপারস্টার বলিনি। শাবানা ম্যাডাম, রাজ্জাক সাহেবরাও কখনো এসব দাবি করেননি। আজ হল নেই, কিন্তু সুপারস্টারের অভাব নেই!”

শাকিব খানের পারিশ্রমিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শাকিব খান এখন যে পরিমাণ নিচ্ছেন, সেটা তাঁর কদর অনুযায়ী ঠিকই আছে। তবে ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাতে শুধু এক শাকিব খান যথেষ্ট নয়। নতুন অভিনেতা তৈরি করতে হবে, নইলে সিনেমা টিকবে না।”

চলচ্চিত্রের ভেতরের বিরোধ নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেন তিনি- “আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের মানুষরাই অনেক সময় শত্রুতে পরিণত হয়। সালমান শাহ তার বড় উদাহরণ। আমি তার পাশে শুটিং করেছি, দেখেছি কীভাবে হতাশায় ভুগতেন। পরিচালক সমিতি পর্যন্ত তাকে বয়কট করেছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা এক নক্ষত্রকে হারালাম।”

রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা সম্পর্কে বলেন, “আমি রাজনীতি করতে চেয়েছি মানুষের পাশে থাকার জন্য। আমার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা নেই, কিন্তু এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তাদের দুঃখ-কষ্টে পাশে থাকতে চাই। রাজনীতি মানেই মারামারি না, মানুষের জন্য কাজ করাটাই আমার রাজনীতি।”

বর্তমানে পরিবার ও ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত এই অভিনেতা। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ছেলে সাদমান আর মেয়ে সামিকা দুজনই আমার প্রাণ। সামিকা এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ইংরেজি মাধ্যমে। সময় পেলেই ওদের নিয়ে ঘুরতে যাই। এখন আমার সুখের কেন্দ্র পরিবার।”

শাকিল খান হয়তো পর্দায় নেই, কিন্তু তাঁর কথাগুলো স্পষ্ট করে, অভিনয় থেকে সরে গেলেও চলচ্চিত্র এখনও তাঁর ভাবনা আর বেদনার জায়গা।

বাংলাধারা/এসআর