‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় শক্তিশালী কাজ খুব কমই হয়েছে’
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৩:৫৩ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল ও গভীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে ধারণ করে শক্তিশালী সিনেমা নির্মাণ, এখনো খুব সীমিত বলে মনে করেন একজন নির্মাতা। তাঁর মতে, মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নিয়ে ভাবলে দেখা যায়, সংখ্যায় অনেক হলেও সত্যিকার অর্থে গভীর, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী কাজ খুব কমই হয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পর্দায় তুলে ধরতে হলে সময়, ধৈর্য ও পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। এখনই সেই সময়, যখন দূরত্ব রেখে, নিরপেক্ষ চোখে ইতিহাসকে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একটি ঘটনাকে ‘থার্ড আই’ বা বার্ডস আই ভিউ থেকে বিশ্লেষণ করলে তবেই ইতিহাসের আসল নির্যাস বেরিয়ে আসে এবং গল্পটি যথাযথভাবে বলা সম্ভব হয়।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখা ও মোস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘শঙ্খনীল কারাগার’ তাঁর কাছে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং কাজগুলোর একটি। ছোটবেলায় দেখা এই সিনেমাটি আজও গভীরভাবে নাড়া দেয়। বিশেষ করে আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয় এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল। তাঁর মতে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহু সিনেমা তৈরি হলেও একেবারে অথেনটিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টির গভীরতা তুলে ধরার কাজ খুব বেশি হয়নি, যদিও এটি তাঁর ব্যক্তিগত উপলব্ধি।
আধুনিক সময়ের কাজের প্রসঙ্গেও প্রশংসা করেন তিনি। চরকিতে সুকর্ণ শাহেদ ধীমান নির্মিত ৩৫ মিনিটের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাজটির কথা উল্লেখ করে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেও কীভাবে শক্তিশালী গল্প বলা যায়, সেটির দারুণ উদাহরণ এটি।
মুক্তিযুদ্ধকে নানা ভাবে ম্যানুপুলেট করার প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর মতে, নিজেদের ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্য দিয়ে ইতিহাসকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসংখ্য মূল্যবান বই রয়েছে, সেগুলো পড়লে বিভ্রান্তির সুযোগ থাকে না। তিনি মনে করিয়ে দেন, সিনেমা একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল; আর সেই দলিল যদি ভুল হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মও ভুল ইতিহাস শিখবে।
তরুণ নির্মাতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা বানাতে হলে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে, বার্ডস আই ভিউ নিয়ে কাজ করা জরুরি। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের আবেগ, যন্ত্রণা ও স্বপ্ন বোঝা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা সম্ভব নয়। কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্মাণ সবসময়ই ইতিহাসের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, একজন নির্মাতার দায়িত্ব হলো সত্যকে প্রশ্ন করা, ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেই ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারলেই তিনি সত্যিকারের নির্মাতা হয়ে ওঠেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও গভীর, আরও সৎ ও সাহসী সিনেমা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, ভবিষ্যতে সেই শক্তিশালী কাজগুলো অবশ্যই আসবে।
বাংলাধারা/এসআর
