নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরাসরি মন্তব্য নয়, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন
প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ১০:৩৯ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী, অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর, বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার (১৩ মে) বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। জবাবে দপ্তরের প্রধান উপ-মুখপাত্র টমাস "টমি" পিগট স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না, বরং দেশটিতে একটি মুক্ত, অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সবার জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নেয়।
তিনি আরও বলেন, “আমরা অবগত যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা হয়। তবে আমরা সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা সকল নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা হয়।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে সমর্থন বা বিরোধিতা না করে, বরং একটি বড় নীতিগত অবস্থান নিয়েছে। ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের কথা পুনরায় উল্লেখ করে বলা হয়- “আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বকে মূল্য দিই এবং তা আরও গভীর করতে আগ্রহী। সেই লক্ষ্যে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছি।”
ব্রিফিংয়ের এক পর্যায়ে একজন সাংবাদিক দাবি করেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল নাকি আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত লস্কর-ই-তইয়্যেবা’র সদস্য হারুন ইজহার-এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেইসাথে বাংলাদেশে কাশ্মির ইস্যুতে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগও তোলেন তিনি।
তবে এসব দাবির সরাসরি জবাব না দিয়ে পিগট একই অবস্থান পুনরাবৃত্ত করেন, যা তিনি আগের প্রশ্নে বলেছিলেন। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা ও মানবাধিকারের প্রশ্নে নীতিগত অবস্থানে সুসংহত থাকায়।
এই প্রতিক্রিয়া থেকে এটি স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র এখনই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নিচ্ছে না। তারা বরং একটি কৌশলী ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখছে- যাতে করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করেও নীতিগত বার্তা দেওয়া যায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি এক ধরনের “ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ” পলিসি, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি অনুযায়ী নিজেদের ভূমিকা নির্ধারণ করবে।
বাংলাদেশে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর প্রতিক্রিয়া এখনো পরিপূর্ণভাবে স্পষ্ট হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যায়- তারা দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে, তবে এই মুহূর্তে সরাসরি কোনও কঠোর অবস্থান নিতে চাইছে না।
বাংলাধারা/এসআর