কাকরাইলে রাতভর অবস্থান, সকালে রাজপথে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ১১:৫৮ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
আবাসন সংকট, শিক্ষাবৃত্তি ও পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনের দাবিতে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তিন দফা দাবিতে ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তারা রাতভর রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কাকরাইল মোড়ে অন্তত অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারীকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কাকরাইল মোড় হয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে, সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির বলেন, “আন্দোলনকারীরা রাত থেকেই এখানে অবস্থান করছেন। এখনো তারা রাস্তা ছেড়ে যাননি।”
বুধবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র উদ্দেশে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লংমার্চ শুরু করলে গুলিস্তান মাজার গেট, মৎস্য ভবন হয়ে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। কাকরাইল মসজিদ এলাকায় পুলিশ প্রথমে ব্যারিকেড বসায়, এরপর লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
এ ঘটনায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের মধ্যে ৩৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।
আহতদের মধ্যে আছেন- জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন, ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি সোহান ফরাজি, দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি মেহেদীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার পর সন্ধ্যায় কাকরাইলে উপস্থিত হন জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন তারা।
একই সময়ে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সাব্বির আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করেন। যদিও আলোচনায় সংকট নিরসনের সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এর আগে মঙ্গলবার ইউজিসিতে (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দল দাবি জানালেও আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে গঠিত আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম লংমার্চের ডাক দেয়।
জবি আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো:
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর আবাসন বৃত্তি চালু করা;
- প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট ছাড়াই অনুমোদন করা;
- দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন শুরু করা।
বুধবার রাত ১২টায় জবি’র সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জবি ঐক্য’ প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “আমাদের ওপর রক্তচক্ষু দেখাবেন না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে।”
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ বোতল নিক্ষেপ করেছে। আমরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে পুলিশের বর্বরতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সন্ধ্যায় জানান, “আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। তবে শিক্ষার্থীরা এখনো সড়ক ছাড়েনি।”
তিনি আরও দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
কাকরাইলে অবস্থানরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনোভাবেই রাজপথ ছাড়বেন না। প্রয়োজনে কর্মসূচি আরও বিস্তৃত হবে।
বাংলাধারা/এসআর