রপ্তানি খাতে এমন সংকট কখনো দেখিনি: এ. কে. আজাদ
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০৫:৩৯ বিকাল

ছবি: সংগৃহিত
চল্লিশ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট আগে কখনো দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ. কে. আজাদ।
রোববার (২০ জুলাই) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো।
ব্যবসায়ী নেতা এ. কে. আজাদ বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ। দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনে এমন সংকট দেখিনি।”
তিনি জানান, সম্প্রতি তার এক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড অংশীদার তাকে ডেকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। তাদের বক্তব্য ছিল, “তোমাদের অবস্থান দুর্বল, ভালো ফল আশা করা যাচ্ছে না।” এমন মন্তব্য শুনে তিনি মর্মাহত ও হতাশ হন।
এ অবস্থায় তিনি একাধিক বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের মধ্যে একজন জানান, রপ্তানি খাতসংশ্লিষ্ট ৯৫ শতাংশ সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান করা হয়েছে, বাকি ৫ শতাংশের বিষয়ে কাজ চলছে।
তবে এ. কে. আজাদের মতে, কেবল আশ্বাসে নয়, কার্যকর পদক্ষেপেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, “ধরে নেওয়া যাক, ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব কমলো, কিন্তু যদি ৫০০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত রপ্তানি হয়, তাহলে তো দেশই লাভবান হবে।”
সংকটের মাত্রা বোঝাতে তিনি বলেন, “আমার এক ক্রেতা ই-মেইলে জানিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যদি শুল্ক আরোপ হয় এবং তা না সরানো যায়, তাহলে শুল্কের ৩৫ শতাংশ আমাকে বহন করতে হবে। এখন প্রশ্ন, আমি সেই শুল্ক কীভাবে বহন করব?”
অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়ায় সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করছে। সেখানে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে প্রতিটি স্তরে যোগাযোগ হচ্ছে। অথচ আমরা এখনো সেই সুযোগই পাইনি।”
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এ. কে. আজাদ। বলেন, “আপনারা বলছেন, সাত-আট মাসের জন্য দায়িত্বে আছেন। এরপর চলে যাবেন। কিন্তু তখন আমরা যাব কোথায়?”
তিনি আরও বলেন, “অনেকে মনে করেন, আমাদের ওপর একজন আছেন, তিনি ফুঁ দিয়ে সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন। ফলে কোনো লবিস্ট নিয়োগ হচ্ছে না, কোনো কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”
সরকার থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর) নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসনই শুল্ক নির্ধারণ করবে। এ. কে. আজাদ সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যদি পারেন, ওই পর্যায়ে গিয়েই কিছু একটা করুন।”
তবে শেষ পর্যন্ত হতাশার সুরেই তিনি বলেন, “এখন আমরা লবিস্ট নিয়োগ করলেও কতটা সফল হতে পারব, তা আমাদের জানা নেই। বাংলাদেশ খুব কঠিন এক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”
গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও একমত পোষণ করেন, সময় নষ্ট না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নে যেতে হবে। তা না হলে দেশের রপ্তানি ও অর্থনীতির ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাধারা/এসআর