তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় সরকার-দল দু’পক্ষেরই ব্যাপক প্রস্তুতি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৫, ১১:৪৭ দুপুর
ছবি: সংগৃহিত
দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আর মাত্র দুদিন দূরে। এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে দলীয় কর্মসূচি, জনসমাগম ও নিরাপত্তা,সব মিলিয়ে রাজধানীতে তৈরি হয়েছে ব্যস্ত প্রস্তুতির চিত্র। ঘটনাটিকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে তুলতে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক প্রস্তুতির পাশাপাশি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের সঙ্গে দলীয় পর্যায়েও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক ব্যবস্থা।
বিএনপি সূত্র জানায়, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে রাজধানীতে প্রায় ২০ লাখ মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে সর্বোচ্চ নেতাকর্মী উপস্থিত রাখার চেষ্টা করবেন, ফলে জনসমাগম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কারণে বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফুটের গণসংবর্ধনা স্থান এবং গুলশান পর্যন্ত পুরো রুটে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। দলীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোম ও মঙ্গলবারের মধ্যেই অধিকাংশ নেতাকর্মী রাজধানীতে পৌঁছাবেন।
বিমানবন্দর-হাসপাতাল-গণসংবর্ধনা: সম্ভাব্য রুট
দলীয় শীর্ষ নেতারা তারেক রহমানকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও পুরো কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। তবে বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখবেন, নাকি আগে ৩০০ ফুটের গণসংবর্ধনায় যাবেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। দলীয় সূত্র বলছে, মাকে দেখতে আগে হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেই অনুযায়ী পুরো আয়োজন সাজানো হচ্ছে।
নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও অতিরিক্ত বগি রিজার্ভের আবেদনও করা হয়েছে।
দেশে ফেরার প্রস্তুতি সম্পন্ন
দলীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারেক রহমান ইতোমধ্যে দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস পেয়েছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে উড়োজাহাজটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
ঢাকায় পৌঁছানোর আগে উড়োজাহাজটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করবে। ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসে তারেক রহমানসহ পাঁচ সফরসঙ্গীর টিকিট বুকিং রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা জারনাজ রহমান, মিডিয়া টিমের প্রধান আবু আবদুল্লাহ সালেহ, পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আব্দুর রহমান সানি এবং তাবাসসুম ফারহানা।
দলীয় নিরাপত্তা বলয়
বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দলের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে। তাঁর নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম কাজ করবে। পাশাপাশি দলের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের সমন্বয়েও আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত সমন্বয় সভা হচ্ছে।
সরকারের নিরাপত্তা প্রস্তুতি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে কোনো নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। তার যাতায়াতকালে থাকবে পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাসভবন ও অফিস এলাকাতেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।
ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তারেক রহমানের কাছাকাছি যেতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।
মাঠে সোয়াট টিম ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট
বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত রুটে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বাসা ও অফিস এলাকায় সুইপিং কার্যক্রমও চালানো হবে।
জিয়ার মাজার জিয়ারত
দেশে ফেরার পর যে কোনো সময় বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতের কথা রয়েছে তারেক রহমানের। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, প্রত্যাবর্তনের পরদিন শুক্রবার তিনি সেখানে যেতে পারেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, “প্রস্তুতি খুব ভালো। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সর্বোচ্চ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং পুরো কর্মসূচি যেন শৃঙ্খলাপূর্ণ থাকে।”
ঢাকা-১৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আমিনুল হক বলেন, “তারেক রহমানের আগমন ঘিরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। এটি হবে ইতিহাসের একটি স্মরণীয় সংবর্ধনা।”
অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় সভা হচ্ছে এবং প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাংলাধারা/এসআর
