বিএনপির বড় শোডাউনের প্রস্তুতি, পাল্টা নয় ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে দলটি
প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ১১:৪৭ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক ঢাকাস্থ সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা যখন তুঙ্গে, বিএনপি তখন পাল্টা কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। বরং দলটি মনোযোগ দিচ্ছে নিজেদের পূর্বঘোষিত ‘গণঅভ্যুত্থান স্মরণে’ ৩৬ দিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির চূড়ান্ত ও সর্ববৃহৎ আয়োজনে ৬ আগস্টের ‘বিজয় মিছিল’-এ। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, নিজেদের শক্তি ও সাংগঠনিক সক্ষমতা প্রমাণের জন্য বিএনপির নতুন করে কিছু করার প্রয়োজন নেই। পাল্টা কর্মসূচিতে গেলে প্রতিপক্ষের গুরুত্ব অযথা বাড়বে বলে মনে করছে দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, ৬ আগস্ট ঢাকায় স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এই ‘বিজয় মিছিল’ হবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলমান কর্মসূচির চূড়ান্ত ধাপ। এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলটি একটি রাজনৈতিক বার্তা দিতে চায় নির্বাচনের সময়সীমা ও পদ্ধতি নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও জনগণের রায় স্পষ্ট, তারা পরিবর্তন চায়।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “জামায়াতে ইসলামী একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। এটি রাজনৈতিকভাবে ইতিবাচক। তাদের সমাবেশের পাল্টা হিসেবে আমরা কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। প্রতিযোগিতার কিছু নেই সবাই নিজ নিজ কর্মসূচি করছে।”
পাল্টা সমাবেশে না গিয়ে বিজয় মিছিলের দিকে মনোনিবেশ করাকে রাজনৈতিক কৌশল বলেই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। তাদের ভাষায়, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বিশেষ করে মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার ইঙ্গিত দেয়। ফলে বিজয় মিছিল শুধু স্মরণ নয়, বরং বর্তমান সরকারের প্রতি একপ্রকার রাজনৈতিক চাপও হয়ে উঠবে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে। বিজয় মিছিল হবে তার চূড়ান্ত ধাপ। সামনে আরও কিছু কর্মসূচি আছে, এরপর বিজয় মিছিলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হবে।”
ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, “বিজয় মিছিল ঘিরে আমরা প্রস্তুতি সভা করব। কর্মসূচি কোন জায়গা থেকে শুরু হবে, কোথায় শেষ হবে, সেটা তখনই চূড়ান্ত হবে। তবে ঢাকায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটবে এটাই নিশ্চিত।”
উল্লেখ্য, বিএনপির চলমান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পেশাজীবী ও নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা, করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ, শিশুদের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক চেতনা চর্চা, পথনাটক এবং ছাত্র-যুবকদের জনসভা। এই ধারাবাহিকতার শেষ কর্মসূচি হবে ৬ আগস্টের বিজয় মিছিল।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এবং জামায়াতের পথ যে আলাদা, তা এখন পরিষ্কার। এক সময়ের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র হলেও আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে কোনো জোট করছে না। বিএনপি বিদ্যমান ব্যবস্থা অনুযায়ী নির্বাচন চায়, আর জামায়াত চায় পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি। এ নিয়ে দুই দলের মধ্যে মতপার্থক্য ও দূরত্ব স্পষ্ট।
তবে বিএনপি বলছে, গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে ন্যূনতম রাজনৈতিক ঐক্য থাকবেই। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দল দুটির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিবৃতিতে পাল্টাপাল্টি অবস্থান, এমনকি কৌশলগত রেষারেষিও দৃশ্যমান।
সবমিলিয়ে বিএনপি এখন নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের দিকে মনোযোগী। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দলটি যে আন্দোলন করে এসেছে, সেই ধারাবাহিকতায় এবার মাঠ কাঁপাতে চায় তারা।
বাংলাধারা/এসআর