তথ্য অধিকার আইন সংশোধনের উদ্যোগ: তথ্য গোপন করলে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা
প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২৫, ১০:০৯ দুপুর

ফাইল ছবি
তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে আরও শক্তিশালী করতে ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইনটির খসড়া প্রণয়ন করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সংশোধনের জন্য মোট চারটি ধারা- ৫, ৬, ৭ ও ২৭ নম্বর ধারায় পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে, যা ১০ জুলাই অনলাইনে জনমত যাচাইয়ের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তথ্য প্রাপ্তিতে বাধা দিলে বর্তমান আইনে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যায়। নতুন খসড়ায় এই সীমা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব এসেছে। একইসঙ্গে প্রতিদিনের জরিমানার হারও বাড়ানো হয়েছে- বর্তমানে ৫০ টাকা হলেও সংশোধনীতে তা ২৫০ টাকা করা হয়েছে।
আইনের ২৭ নম্বর ধারায় এই সংশোধনের প্রস্তাব এনে বলা হয়েছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্যপ্রাপ্তির পথে বাধা সৃষ্টি করেন, তাহলে কমিশনের পক্ষে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলকভাবে জরিমানা আরোপ করা হবে-বিশেষ করে যদি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে দুর্নীতি বা অনিয়ম ঢাকতেই তথ্য গোপন করা হয়েছে।
নতুন খসড়ায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ তাদের বাজেট, আয়-ব্যয়, প্রকল্পের আর্থিক প্রতিবেদন, সরকারি ক্রয়ের তথ্য, চুক্তির কপি ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন গোপন করতে পারবে না। এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে, যাতে নাগরিকেরা রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের বিষয়ে অবগত থাকতে পারেন।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্তৃপক্ষকে প্রতি বছর নির্দিষ্ট কিছু তথ্যসহ একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। এতে সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে জনগণের স্বচ্ছ ধারণা নিশ্চিত হবে।
আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক কর্তৃপক্ষকে তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত, চলমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছে, কোনো কর্তৃপক্ষ তথ্যের প্রাপ্যতা সংকুচিত করতে পারবে না। বরং তা সহজলভ্য করতে হবে।
প্রতিটি সরকারি সংস্থাকে তাদের সব তথ্যের একটি ক্যাটালগ ও সূচি তৈরি করে তা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে ৫ নম্বর ধারার সংশোধনীতে। এতে তথ্যচর্চার একটি সংগঠিত কাঠামো গড়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আইনের ৭ নম্বর ধারায় আগে বলা ছিল কিছু তথ্য ‘প্রকাশ না করার যৌক্তিক কারণ’ থাকতে পারে। কিন্তু সংশোধনীতে যুক্ত করা উপধারাগুলোতে বলা হয়েছে, যদি জনস্বার্থে প্রয়োজন হয়, তাহলে এসব তথ্যে প্রবেশাধিকার প্রদান করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব খাদিজা তাহেরা ববি জানান, “এই সংশোধনী প্রস্তাবগুলো জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে এসেছে। আমরা খসড়াটি অনলাইনে উন্মুক্ত করেছি, যাতে যে কেউ মতামত দিতে পারেন।” তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়ে ইতোমধ্যে দুটি বৈঠক হয়েছে। নতুন কোনো প্রস্তাব এলে তা নিয়েও কাজ করা হবে।”
তথ্য অধিকার আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ রাষ্ট্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এক বড় পদক্ষেপ। জরিমানার মাত্রা বাড়ানো, তথ্য গোপনের সীমা টেনে দেওয়া এবং প্রতিবছর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এই আইনের কার্যকারিতা আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে, আইন বাস্তবায়নে প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও তথ্য কমিশনের স্বাধীনতা অটুট রাখতে পারলেই কেবল সাধারণ নাগরিকেরা এ আইনের প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারবেন। নতুবা এটি কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
বাংলাধারা/এসআর