গভীর রাতে চাঁদাবাজি ও ভাঙচুর: কলাবাগান থানার ওসি ও এসআই প্রত্যাহার
প্রকাশিত: মে ০৫, ২০২৫, ০৪:৪২ দুপুর

ফাইল ছবি
গভীর রাতে ঢুকে ঘরে ভাঙচুর, ভয়ভীতি এবং কোটি টাকার চাঁদা দাবির ঘটনায় কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেনকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সোমবার (৫ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
ভুক্তভোগী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল ওয়াদুদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে তার বাসায় ঘটে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যার লিখিত অভিযোগ তিনি ২ মে থানায় দায়ের করেন। পরে ৪ মে তা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে পুলিশ প্রশাসন।
অভিযোগে ড. ওয়াদুদ জানান, কলাবাগান থানার এসআই বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল তার বাসায় হঠাৎ করেই হানা দেয়। এ সময় তার ম্যানেজার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল টিম এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান এসে তাদের ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলেন।
এরপর এক ভাড়াটিয়া ও ভবনের নাইট গার্ড ঘটনাটি জানাতে চাইলে ওসি নিজেই তাদের দুজনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে এই দৃশ্যও ধরা পড়ে।
ড. ওয়াদুদের ভাষ্যমতে, পুলিশের পোশাকধারী ও সিভিল বেশে আসা দলটি তার তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। বাড়ির ভেতর থেকে শব্দ শুনে আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কে পড়ে যান। একটি দরজা ভাঙার পর দ্বিতীয় দরজা ভাঙতে গেলে তিনি ওসিকে ফোন করেন। ওসি তখন বলেন, “ডিবির লোক এসেছে, আপনি বের হয়ে আসেন।”
জানান, পুলিশের ভয়ে দরজা খুলতেই এসআই বেলাল ও এক মান্নান নামের পুলিশ সদস্য তাকে ঘরের ভেতর ঠেলে নিয়ে যায় এবং জানতে চায়, “কী কী অস্ত্র আছে আপনার কাছে?” এরপর মান্নান তাকে আলাদা করে বলেন, “এখনই যদি ১ কোটি টাকা দেন, তাহলে আপনাকে থানায় নিতে হবে না। আর না দিলে আপনার নামে ১০টা মামলা হবে।”
বাধ্য হয়ে তিনি ২ লাখ টাকা হাতে তুলে দেন এসআই বেলাল ও মান্নানকে। বাকি অর্থ ব্যাংকিং আওয়ারে দেওয়ার শর্তে তার বাসায় তিনজন সিভিল পোশাকধারীকে পাহারাদার হিসেবে রেখে যায় অভিযুক্তরা, যারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়।
চাঁদা নেওয়ার পর, পুলিশ সদস্য বেলাল একটি ভিডিও জবানবন্দি রেকর্ড করেন যেখানে বলা হয়, “বাসায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।” অথচ সিসিটিভি ফুটেজ, ভাঙা দরজা এবং ভীত-সন্ত্রস্ত বাসিন্দারা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।
ঘটনার লিখিত অভিযোগ পেয়ে ড. ওয়াদুদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ডিএমপি কমিশনার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অভিযুক্ত ওসি ও এসআইকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে এবং প্রমাণ সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাধারা/এসআর