ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠবে দেশের সবচেয়ে বড় পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১০:০১ দুপুর  

ফাইল ছবি

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশে প্রথমবারের মতো গড়ে তোলা হচ্ছে বৃহৎ পরিসরের একটি পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স, যার অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হবে দেশের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পরিশোধিত জ্বালানি পণ্যের আমদানি নির্ভরতা কমানোই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির প্রস্তাব বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান গণমাধ্যমকে জানান, “এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত মাইলফলক হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা বছরে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের পরিকল্পনা করছি।” তিনি আরও বলেন, কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে কয়েকটি আগ্রহী বিনিয়োগকারীও পাওয়া গেছে।

বিপিসি সূত্র বলছে, দেশে প্রতিবছর জ্বালানি তেলের চাহিদা ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। অথচ দেশে বিদ্যমান মজুত ক্ষমতা প্রায় ১.৫৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা মাত্র ৩০-৩৫ দিনের চাহিদা পূরণে সক্ষম।

বর্তমানে দেশে একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) বছরে ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তেল পরিশোধন করতে পারে। যদিও নতুন ইআরএল ইউনিট-২ চালু হলে শোধনক্ষমতা বাড়বে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পর্যন্ত।

জানা গেছে, মাতারবাড়ী-মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ (MIDIZ) অঞ্চলে ৪০৪.৭৬ হেক্টর জমি এই কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে জ্বালানি খাতে কয়েকটি বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে- এর মধ্যে রয়েছে একটি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে চ্যানেল সম্প্রসারণ প্রকল্প।

চ্যানেল সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারিত জমি ছাড়াও এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনালের জন্য এখনো ৯২.৮৪ হেক্টর জমি অবশিষ্ট রয়েছে। এ ছাড়া, মাতারবাড়ী আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত জমির একটি অংশ নতুন পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্সে ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত স্থানটি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) সংলগ্ন হওয়ায়, সাগর থেকে সরাসরি অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল খালাস করা সম্ভব হবে, যা পরিবহন ও খরচ সাশ্রয়ে সহায়ক হবে।

এই প্রকল্প নিয়ে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে এরই মধ্যে দুটি বৈঠক হয়েছে—একটি ১৯ জুন, অন্যটি ৩ জুলাই। বৈঠকে জাইকা প্রকল্পটি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবিত কমপ্লেক্সটি জ্বালানি শিল্প জোনের প্লট ২৫, ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বরে স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে দেশের বার্ষিক জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন হলেও বিপিসির শোধন ক্ষমতা মাত্র ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
বিপিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০-৩১ অর্থবছরের মধ্যে এই চাহিদা দাঁড়াবে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনে, আর ২০৪০-৪১ সালের মধ্যে তা ১৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে মাতারবাড়ীর পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স প্রকল্পকে সময়োপযোগী ও ভবিষ্যতমুখী একটি বড় উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বাংলাধারা/এসআর