শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ১১:৪৫ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে 'অলআউট ক্রিকেট' খেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে লিটন দাসের নেতৃত্বে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করলো টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এটিই বাংলাদেশের প্রথম কোনো সিরিজ জয়। আজই ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরছেন লিটনরা।
সিরিজের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ হেরেছিল তারা। তবে ডাম্বুলায় দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা আনে এবং কলম্বোর শেষ ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে পরিণত হয়। এই জয় লিটনের নেতৃত্বে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তবে এ বছর আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারায় দলের ওপর ব্যাপক চাপ ছিল। শ্রীলঙ্কা সফরটি ছিল নিজেদের প্রমাণ করার এক সুবর্ণ সুযোগ, আর সে পরীক্ষায় দারুণভাবে উতরে গেলেন লিটনরা।
টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে অফস্পিনার মেহেদী হাসানের ঘূর্ণি জাদুতে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ শুরুতেই ধসে পড়ে। শুরু থেকে চাপ বজায় রেখে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নেয় টাইগার বোলাররা। শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩২ রান সংগ্রহ করে।
মেহেদী হাসান বল হাতে অসাধারণ পারফর্ম করেন। তিনি শুরুতেই কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে দেন। এরপর একে একে বিদায় করেন দিনেশ চান্দিমাল, অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা এবং সেট হয়ে যাওয়া ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকে। ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন মেহেদী, যা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার সেরা বোলিং ফিগার। এই দুর্দান্ত বোলিংয়েই শ্রীলঙ্কার রানের গতি আটকে যায়। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে কেবল পাথুম নিশাঙ্কার ৪৬ এবং দাসুন শানাকার অপরাজিত ৩৫ রানই উল্লেখযোগ্য ছিল। শানাকা শেষ ওভারে শরীফুলের বলে ২২ রান নিয়ে দলের সংগ্রহ ১৩২-এ পৌঁছান।
১৩৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন গোল্ডেন ডাক হয়ে থুশারার বলে এলবিডব্লিউ হন। তবে এরপর লিটন কুমার দাস এবং তানজিদ হাসান তামিম সতর্ক ব্যাটিং করে ইনিংসকে এগিয়ে নেন। দ্বিতীয় উইকেটে তারা ৭৪ রানের মূল্যবান জুটি গড়েন। লিটন দাস ব্যক্তিগত ৩২ রানে আউট হলেও, তার ইনিংস ৮ রানে শেষ হতে পারত যদি রিভিউ নিয়ে তিনি বেঁচে না যেতেন।
জুটি ভাঙার পর তানজিদ হাসান তামিম নিজের স্বাভাবিক খেলা চালিয়ে যান। ভ্যান্ডারসিকে ছয় ও চার মেরে তিনি ক্যারিয়ারের পঞ্চম টি-টোয়েন্টি হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। ৪৭ বলে ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান, যা টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা ৬৭ রান ছিল তার আগের সেরা। তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে হার না মানা ২৭ রান।
শেখ মেহেদীকে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্টের একটি দারুণ পদক্ষেপ ছিল। তিনি বল হাতে ধারাবাহিক ব্রেক থ্রু দিয়ে লঙ্কানদের ১৩২ রানে আটকে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শরিফুল ইসলামের প্রথম ওভারেই নিশাঙ্কা বাউন্ডারি মেরে শুরু করলেও, শরিফুলের কৌশলী বলে কুশল মেন্ডিস আউট হন। এরপর শেখ মেহেদী কুশল পেরেরা এবং দিনেশ চান্দিমালকে দ্রুত ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলেন।
বাংলাদেশী বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ের কারণে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিল ৪০ রান। ১০ ওভারে তারা ৪ উইকেট হারিয়ে ৬৬ রান করে। তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান ও শামীম হোসেন প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। শেষ ১০ ওভারেও তারা মাত্র ৬৬ রান যোগ করতে সক্ষম হয়।
বাংলাধারা/এসআর