উচ্চকক্ষ ও নারী প্রতিনিধিত্বে পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়নি রাজনৈতিক দলগুলো
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:৩৩ রাত

ছবি: পিআইডি
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার বিষয়ে অনেক রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে একমত হলেও, এসব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে স্পষ্ট মতৈক্যে পৌঁছানো যায়নি। সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের ১৩তম দিনের আলোচনায় এসব তথ্য জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “এ দুটি বিষয় ইতিপূর্বেও একাধিকবার আলোচনায় এসেছে। যদিও কিছু প্রাথমিক সমর্থন মিলেছে, কিন্তু পদ্ধতিগত মতপার্থক্যের কারণে এখনো ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি।”
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ গঠনে দলগুলোর প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে (Proportional Representation বা PR) আসন বণ্টনের ব্যবস্থা রাখা হয়। এতে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টিসহ ২১টি দল একমত পোষণ করলেও, বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে। বিএনপির মতে, সংসদে যেসব আসন পেয়েছে, সেই অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠিত হওয়া উচিত।
বিএনপিসহ পাঁচটি দলের আপত্তির মুখে বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে কমিশন ৬৪ জেলা ও ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য দিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের মডেল দেয়। তবে সেটিও প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ অধিকাংশ দল।
আলী রীয়াজ বলেন, “একটি পক্ষ চায় সংসদে প্রাপ্ত আসন অনুযায়ী উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব, আরেক পক্ষ চায় জাতীয় ভোটের শতাংশ অনুযায়ী আসন বণ্টন। আমরা এখনো একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় পৌঁছাতে পারিনি। আলোচনা অব্যাহত থাকবে।”
সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার বিষয়ে বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে সম্মত হলেও, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, এই ১০০ আসনে শুধুমাত্র নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং এটি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে। এনসিপি প্রস্তাবটি সমর্থন করলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ দল এতে সায় দেয়নি।
পরবর্তীতে কমিশন নতুন করে প্রস্তাব দেয়- যেসব দল ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, তাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দিতে হবে। কিন্তু এই প্রস্তাবও অধিকাংশ দল প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিএনপি জানায়, নারী আসনের সংখ্যা বাড়ানোয় তাদের আপত্তি নেই, তবে নির্বাচনের পদ্ধতি হতে হবে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী। জামায়াত জানায়, তারা নারী আসন বৃদ্ধি সমর্থন করবে যদি পিআর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এনসিপি আবার সরাসরি নির্বাচনের নতুন ফর্মুলা দেয় নারী আসনের ক্ষেত্রে।
আলী রীয়াজ জানান, “আগামীকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যাচ্ছে। আগামীকালও উচ্চকক্ষ ও নারী প্রতিনিধিত্ব ইস্যুতে আলোচনা চলবে। ইতোমধ্যে কিছু দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়ে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে আগামী বুধবার বা বৃহস্পতিবার কমিশন আলাদা বৈঠকে বসবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশাবাদী- রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় এই সংলাপ সফলভাবে সম্পন্ন হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে।”
বাংলাধারা/এসআর