মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে 'অবস্থানপত্র' তৈরি করছে বাংলাদেশ
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৯:১১ রাত

ছবি: সংগৃহিত
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে দেশটির দেওয়া শর্তগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এই বিষয়ে একটি 'অবস্থানপত্র' তৈরির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মতামত সংগ্রহ করছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়।
আগামী সপ্তাহে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এই শুল্ক ইস্যুতে তৃতীয় দফায় আলোচনার কথা রয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব, তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে বলেছে। এই বৈঠকে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানসহ খাদ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পররাষ্ট্রসহ ১১টি মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব সাংবাদিকদের জানান, আমদানি-রপ্তানির বিভিন্ন দিক অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে জড়িত, এবং তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব আইন রয়েছে। সে কারণেই তাদের মতামত নেওয়ার জন্য এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখন নিয়মিত বৈঠক হবে এবং এরপর বাংলাদেশের অবস্থানপত্র প্রস্তুত করে যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো হবে। এর ভিত্তিতেই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলবে।
বাণিজ্যসচিব আরও উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক ইস্যু একটি বৈশ্বিক বিষয় এবং সারা বিশ্ব যে পদ্ধতি অনুসরণ করে, বাংলাদেশও তাই করছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এখনও তৃতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট কোনো সময় জানায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন, "আমরা যোগাযোগ করছি।"
এদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবস্থানপত্র তৈরির প্রস্তুতি হিসেবে গতকাল বিকেল পাঁচটায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জুম প্ল্যাটফর্মে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। একই ধারাবাহিকতায় সাড়ে পাঁচটায় দেশটির আরেক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। আগামী ২২ জুলাই আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার আলোচনা গত শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে শেষ হয়েছে। বৈঠকের পর শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, দুই দেশ আরও কিছু বিষয়ে একমত হলেও কয়েকটি বিষয় এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও আলোচনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি চাইছে, যার মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যুও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিরোধী কিছু শর্তও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে একই সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখার কথাও উল্লেখ করেছে দেশটি।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে।
বাংলাধারা/এসআর