১১ আগস্ট মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ১১ আগস্ট মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন। এই দ্বিপক্ষীয় সফরের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার সম্পর্ক জোরদার করা এবং অভিবাসন, বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা করা। ড. ইউনূসের এই সফরে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতা বিশেষ প্রাধান্য পাবে। 

সফর শুরুর পরদিন, অর্থাৎ আগামী ১২ আগস্ট, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে এবং অগ্রাধিকার অনুযায়ী কয়েকটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হবে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে আনোয়ার ইব্রাহিম ড. ইউনূসের আমন্ত্রণে ঢাকা সফর করেছিলেন, যা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের ঢাকা সফর। সেই সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অভিবাসন, শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণ, বিনিয়োগ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও শিল্প সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কৌশলগত সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধান উপদেষ্টার এবারের মালয়েশিয়া সফরেও এসব বিষয়ই প্রাধান্য পাবে এবং এই খাতগুলোতে কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে।

দুই দেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকে রাজনৈতিক বিষয় বা নির্বাচনের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে কিনা জানতে চাইলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে জানায়, বৈঠকটি দ্বিপক্ষীয় হওয়ায় দুই দেশের স্বার্থের বিষয়গুলোই গুরুত্ব পাবে। তবে, মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে যদি রাজনৈতিক বা নির্বাচন ইস্যুতে জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

এদিকে, মালয়েশিয়া সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা ইন্দোনেশিয়া সফরে যেতে পারেন বলে ঢাকাস্থ সংশ্লিষ্ট মিশনের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "প্রধান উপদেষ্টার ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে আমাদের আগ্রহ রয়েছে। সফরের এজেন্ডা নির্ধারণ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ চলছে। তবে তিনি যাবেন কিনা, তার সিদ্ধান্ত আমরা জানাতে পারি না।"

আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে জানায়, ইন্দোনেশিয়ার পক্ষ থেকে আগ্রহ থাকায় ড. ইউনূস ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া যেতে পারেন। বৈঠকের এজেন্ডা স্বাগতিক দেশ নির্ধারণ করে এবং এ নিয়ে কাজ চলছে। ঢাকা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে আগ্রহী। যদি সফরটি হয়, তাহলে এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এই সম্ভাব্য সফরে জ্বালানি, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা সংকট ইস্যু প্রাধান্য পেতে পারে। এছাড়াও, শিক্ষা সংক্রান্ত (উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি), মৎস্য আহরণসহ কয়েকটি বিষয়ে এমওইউ স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে জ্বালানি প্রযুক্তি বিনিময়, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং এলএনজি সরবরাহ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার সম্ভাব্য সফরে এই খাতে যৌথ প্রকল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশে ইন্দোনেশীয় বিনিয়োগ, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং বাংলাদেশি পণ্যের বাজার প্রবেশাধিকার নিয়েও দুপক্ষের মধ্যে বিস্তৃত আলোচনা হতে পারে।

এই সফরগুলো বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও নতুন মাত্রা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাধারা/এসআর