ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ভিনদেশের নির্বাচনে মন্তব্য নিষিদ্ধ: বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসে কড়া বার্তা ওয়াশিংটনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০২:০৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

যুক্তরাষ্ট্র তার কূটনীতিকদের আর বিদেশি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে নিযুক্ত সব মার্কিন দূতাবাসে এক তারবার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন। রয়টার্সের হাতে আসা একটি অভ্যন্তরীণ নোটে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো দেশের নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা মন্তব্য করতে পারবেন না, যদি না সেটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির “সুস্পষ্ট ও জরুরি স্বার্থ” সম্পর্কিত হয়। এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে এক ধরনের সরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

তারবার্তায় আরও বলা হয়, “যদি কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করা অপরিহার্য হয়, তবে সেটি হবে সংক্ষিপ্ত এবং সীমিত- মূলত বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানানো এবং প্রয়োজন হলে অভিন্ন পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থের দিকটি তুলে ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।”

নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিনদেশের নির্বাচনের স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মার্কিন কূটনীতিক প্রকাশ্যে মতামত দিতে পারবেন না। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারা এ বিষয়ে কিছু বলবেন না।

এখন থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো বিবৃতি শুধুমাত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। শীর্ষ পর্যায়ের অনুমতি ছাড়া কোনো কূটনীতিক এ বিষয়ে এককভাবে কথা বলতে পারবেন না বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

নতুন এই নির্দেশনায় ২০১৭ সালের ১৩ মে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া একটি ভাষণের উল্লেখ রয়েছে। সেই ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন, “পশ্চিমা হস্তক্ষেপকারীরা” আর অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থা নির্ধারণ করবে না। বরং যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়তে চায়।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে তার ঐতিহ্যবাহী “গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রপ্তানি”-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসতে শুরু করে। মানবাধিকার ও নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিয়ে অবস্থান নেওয়াকে অনেক সময় তারা বিদেশি বিষয়ে “অযাচিত হস্তক্ষেপ” বলেই বিবেচনা করেছে।

যদিও মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির মুখ্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল, তবে সমালোচকেরা প্রায়ই অভিযোগ তুলেছেন—যুক্তরাষ্ট্র এসব আদর্শ selectively প্রয়োগ করে। মিত্রদেশগুলোর ক্ষেত্রে এসব নীতিমালার কড়া প্রয়োগ দেখা যায় না বলেই দাবি তাদের।

পর্যবেক্ষকদের মতে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে এই পরিবর্তন দেশটির বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভূমিকার একটি নতুন রূপ। ভিনদেশে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য থেকে সরে আসা বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে পাঠানো নতুন এই বার্তা স্পষ্ট করে দিল যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে আর ‘গণতন্ত্রের শিক্ষক’ হতে চায় না। বরং তারা ভিনদেশের রাজনীতিতে ‘নিরব পর্যবেক্ষক’ হিসেবে থেকে নিজস্ব স্বার্থের দিকে নজর দেবে- এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।


বাংলাধারা/এসআর