ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ডি-বক্সের বাইরেই ঋতুপর্ণার গোলের রাজত্ব

স্পোর্টস্ ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুলাই ০৯, ২০২৫, ০২:১৪ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশ নারী ফুটবলের পোস্টার গার্ল ঋতুপর্ণা চাকমা। বয়স মাত্র ২১, অথচ রাঙামাটির মগাছড়ি গ্রামের এই মেয়ে এখন দেশের ফুটবলবোদ্ধাদের চোখে বাংলাদেশের মেসি। মিয়ানমারে সদ্য শেষ হওয়া এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সেই প্রথমবারের মতো নারী এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। একক নৈপুণ্যে করেছেন দর্শনীয় পাঁচটি গোল। তবে মেসির সঙ্গে নিজের তুলনায় মোটেও স্বস্তি নেই ঋতুপর্ণার।

ভুটানের নারী লিগ খেলতে গিয়ে সেখান থেকেই সমকালের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নিজের গোলের ধরন, এশিয়ান কাপে দেশের সম্ভাবনা, ভবিষ্যতের স্বপ্ন-সব নিয়েই খোলামেলা কথা বলেছেন এ উইঙ্গার।

‘আমি যে গোলগুলো করি, প্রায় সবই ডি-বক্সের বাইরে থেকে,’ বলেন ঋতুপর্ণা। যোগ করেন, ‘এই পজিশন থেকে গোল করতে আমার ভালো লাগে। আত্মবিশ্বাসও থাকে।’ মিয়ানমারের বিপক্ষে বাঁ পায়ে করা সেই দর্শনীয় গোলটির কথাও স্মরণ করলেন তিনি।

নিজের গোলের ভিডিও দেখেন কিনা—জিজ্ঞাসায় হেসে বলেন, ‘হাজারবার দেখেছি। ম্যাচ শেষ করে রুমে এসে আবার ভিডিও ক্লিপগুলো দেখি। নিজেও অবাক হয়ে যাই।’

বহু সমর্থক তাকে বাংলাদেশের মেসি বলে ডাকলেও ঋতুপর্ণা নিজেকে তুলনা করতে নারাজ। বলেন, ‘মেসি তো মেসিই। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। তবে একটা কথা বলতে চাই-আমি আসলে রোনালদোর (সিআর সেভেন) ভক্ত। স্পট কিক নিতে তার মতোই চেষ্টা করি।’

এশিয়ান কাপের বাকি ১০ মাসকে ঋতুপর্ণা দেখছেন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে। বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে ভালো করতে হলে আমাদের এই কয়েক মাস কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বড় বড় দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলতে হবে। র‍্যাঙ্কিংয়ে উপরের কোনো দলের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেলে আমাদের শক্তি-দুর্বলতা বোঝা সহজ হবে।’

বাংলাদেশের বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা কতটা দেখছেন? এমন প্রশ্নে কিছুটা সংযত ঋতু, ‘এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এশিয়ান কাপে প্রতিপক্ষ কারা হবে, সেটাও এখনও জানা নেই। তবে স্বপ্ন আছে, বাংলাদেশকে অলিম্পিকের মতো বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই।’

সম্প্রতি কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে সিনিয়রদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সাবিনা খাতুনসহ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় মিয়ানমারের দলে ছিলেন না। সেটি নিয়ে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমি চাই, আমাদের ক্যাপ্টেন সাবিনা আপু এবং অন্যান্য সিনিয়ররা আবার দলে ফিরুক। পুরো সিনিয়র টিম থাকলে আমাদের বন্ডিং আরও ভালো হয়। এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইয়ে তাদেরও টিমে থাকা উচিত ছিল বলে মনে করি।’

কোচ বাটলার বলেছেন, ভুটান লিগের চেয়ে বড় কোনো লিগে খেলার যোগ্য ঋতুপর্ণা। এ বিষয়ে জানাতে গিয়ে হেসে বলেন, ‘ভুটানের লিগ খারাপ না। আমাদের দেশে তো সেটাও হয় না। ম্যানেজমেন্ট, সংগঠক—সবাই পেশাদার ভুটানে। কোচ বলেছেন, আমি মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপে খেলতে পারব। তাঁর কথায় খুশি, তবে কোনো প্রস্তাব এখনও পাইনি।’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে কিছু প্রত্যাশাও আছে ঋতুপর্ণার। ‘আমাদের আবাসন ব্যবস্থার উন্নতি দরকার। ট্রেনিং সুবিধা বাড়াতে হবে। বিদেশে গিয়ে ক্যাম্প করলে ভালো হয়। যেমন ভাইয়েরা (পুরুষ দল) বিদেশে ক্যাম্প করেন, আমাদেরও সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে মনের শক্তি ও স্পিরিট বেড়ে যাবে,’ বলেন তিনি।

খেলার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে পড়ছেন ঋতুপর্ণা। তবে স্বীকার করলেন, একসঙ্গে খেলা আর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। ‘নিয়মিত ক্লাস করতে পারি না। রাতে ক্যাম্পে একটু পড়ার সুযোগ পাই। সত্যি বলতে খেলাধুলা আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালানো খুব কষ্টের,’ হাসতে হাসতে বলেন তিনি।

সবশেষে মায়ের অসুস্থতার কথা মনে পড়ে যায় ঋতুপর্ণার। ‘মা ছয়-সাত মাস ধরে অসুস্থ। তিনি জানেনও না কী রোগে ভুগছেন। খেলার আগে বা পরে যখনই সময় পাই, মায়ের সঙ্গে কথা বলি। মাঠে নামি দেশের জন্য, মায়ের জন্য।’

বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাস লেখা এই তরুণীর লক্ষ্য এখন এশিয়ান কাপের মঞ্চ পেরিয়ে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের মতো বিশ্বমঞ্চ জয় করা। তার চোখে স্বপ্ন-সবুজ-লাল জার্সিতে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার।


বাংলাধারা/এসআর