নতুন পোপ নির্বাচন: আলোচনায় কারা এগিয়ে?
প্রকাশিত: মে ০৫, ২০২৫, ০৪:১৪ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
২১ এপ্রিল পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন ক্যাথলিক চার্চের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস। প্রায় ১.৪ বিলিয়ন রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসীর নেতৃত্বে পরিবর্তনের এ সময়টি তাই ঐতিহাসিক ও গুরুত্ববহ। ভ্যাটিকানে শুরু হয়েছে পরবর্তী পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া।
বিশ্বের কার্ডিনালরা ইতোমধ্যে একত্রিত হচ্ছেন। আলোচনার পর আগামী ৭ মে’র পর শুরু হবে ‘কনক্লেভ’-সিস্টিন চ্যাপেলের সিল করা দরজার পেছনে অনুষ্ঠিত হবে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি। বয়সসীমা অনুযায়ী, ৮০ বছরের নিচের ১৩৫ জন কার্ডিনালই ভোট দিতে পারবেন। তবে আলোচনায় অংশ নিতে পারবেন সব কার্ডিনাল।
পোপ নির্বাচনকে ঘিরে তীব্র আলোচনা আর গোপন কূটনীতির পাশাপাশি উঠে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম। আসুন, একনজরে দেখে নিই কারা রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে-
জঁ-মার্ক অ্যাভেলিন (ফ্রান্স)
ফরাসি শহর মার্সেইয়ের আর্চবিশপ অ্যাভেলিনের বয়স ৬৬। ক্যাথলিক সমাজে ‘জন চতুর্বিংশ’ নামে পরিচিত এই ধর্মগুরুর চেহারায় রয়েছে সংস্কারপন্থী পোপ জন ত্রয়োবিংশের ছাপ। প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস একবার রসিকতা করে বলেছিলেন- তার উত্তরসূরি হবেন ‘জন চতুর্বিংশ’। এই উক্তি অ্যাভেলিনকে ঘিরে জল্পনা বাড়িয়েছে।
লুইস আন্তোনিও ট্যাগল (ফিলিপাইন)
এশিয়ার সম্ভাব্য প্রথম পোপ হতে পারেন ৬৭ বছর বয়সি ম্যানিলার সাবেক আর্চবিশপ লুইস ট্যাগল। একসময় পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ ও উত্তরসূরি হিসেবে আলোচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার প্রভাব কিছুটা কমেছে। তিনি ফিলিপাইনে গির্জার কঠোর অবস্থানের সমালোচক, বিশেষত সমকামী ও বিবাহবিচ্ছিন্নদের বিষয়ে। তবে গর্ভপাতবিরোধী অবস্থানে তিনি অনড়।
পিটার এরদো (হাঙ্গেরি)
৭২ বছর বয়সি হাঙ্গেরিয়ান কার্ডিনাল পিটার এরদো মনোভাব ও মতাদর্শে কিছুটা রক্ষণশীল হলেও ফ্রান্সিসের সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় রেখেছেন। ইতালীয়সহ একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় দক্ষতার কারণে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে পারেন তিনি।
মারিও গ্রেচ (মাল্টা)
ইউরোপের ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মাল্টার গোজো দ্বীপে জন্ম নেওয়া কার্ডিনাল গ্রেচ বর্তমানে সিনডের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বে আছেন। একসময় রক্ষণশীল ধারা থাকলেও পরে ফ্রান্সিসের সংস্কারপন্থি দলে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন। বয়স ৬৮।
হুয়ান হোসে ওমেলা (স্পেন)
বার্সেলোনার আর্চবিশপ ওমেলা পোপ ফ্রান্সিসের আস্থাভাজন ছিলেন। সাধারণ জীবনযাপন, বিনয়ী আচরণ ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতি অঙ্গীকার তাকে অনন্য করে তুলেছে। তার নামও আলোচনায় রয়েছে।
পিয়েত্রো প্যারোলিন (ইতালি)
ভ্যাটিকানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ৭০ বছর বয়সি ইতালিয়ান কার্ডিনাল প্যারোলিন। কূটনৈতিক দক্ষতা ও ভাষাজ্ঞান তাকে অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। তাকে উদার ও রক্ষণশীলদের মধ্যে একটি ‘সমঝোতামূলক প্রার্থী’ হিসেবে দেখা হয়।
জোসেফ টোবিন (যুক্তরাষ্ট্র)
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখনও কোনো পোপ নির্বাচিত হয়নি। ৭২ বছর বয়সি নিউ জার্সির আর্চবিশপ টোবিনের সম্ভাবনা খুব বেশি না থাকলেও ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে তার নাম শোনা যাচ্ছে। পোপ ফ্রান্সিস ২০১৬ সালে তাকে কার্ডিনাল পদে উন্নীত করেন।
পিটার কোডও অ্যাপিয়াহ টার্কসন (ঘানা)
সাব-সাহারা আফ্রিকা থেকে সম্ভাব্য প্রথম পোপ হতে পারেন কার্ডিনাল টার্কসন। ঘানার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নেওয়া এই ধর্মগুরু ভ্যাটিকানে দীর্ঘ সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বয়স ৭৬।
মাত্তেও মারিয়া জুপ্পি (ইতালি)
৬৯ বছর বয়সি বোলোনিয়ার আর্চবিশপ জুপ্পি পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার জন্যই অনেকে তাকে ‘ইতালির বারগোগ্লিও’ নামে ডাকেন- বারগোগ্লিও ছিল ফ্রান্সিসের আসল নাম। ১৯৭৮ সালের পর ইতালি থেকে আর কোনো পোপ হয়নি। ফলে তার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পোপ নির্বাচন একাধারে আধ্যাত্মিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ভোটের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কার্ডিনালদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়। উদারতা, সংস্কার, আঞ্চলিক বৈচিত্র্য, অভিজ্ঞতা এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা- সব মিলিয়ে এক নতুন নেতা খুঁজছে ক্যাথলিক চার্চ।
৭ মে’র পর পৃথিবী জানতে পারবে, কে হবেন সেই নতুন আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক। তথ্যসূত্র: রয়টার্স
বাংলাধারা/এসআর