ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বিদায় নিলেন ‘দুর্দান্ত’ ইলন মাস্ক
প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ১২:০৯ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ককে বিদায় জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে ইলন মাস্ক নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প মাস্কের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, “ইলন এক কথায় দুর্দান্ত। তিনি আমাদের প্রশাসনের অংশ হওয়ার পর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তার নেতৃত্ব ও চিন্তাশক্তির কারণেই আমরা অল্প সময়ে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছি। যদি তিনি না থাকতেন, তবে এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নে আমাদের একাধিক প্রজন্ম লেগে যেত।”
তিনি আরও বলেন, “আজ ইলন বিদায় নিচ্ছেন, তবে আমি বিশ্বাস করি, এটা শুধুই আনুষ্ঠানিক বিদায়। তিনি ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থাকবেন, কোনো না কোনোভাবে।”
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন মাস্ক। নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্প তাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর মাস্ককে নতুনভাবে গঠিত বিভাগ ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ) এর প্রধান করা হয়।
এই বিভাগের মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি ব্যয় সংকোচন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি। দায়িত্ব নেওয়ার পর মাস্ক ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসেন- সরকারি খরচ কমাতে হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই, বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত, এমনকি অভ্যন্তরীণ গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ভর্তুকিও বাতিল করা হয়।
সরকারি ব্যয় হ্রাসের পদক্ষেপগুলো শুরুতে প্রশংসা পেলেও পরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। হাজারো চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন আদালতে মামলা দায়ের করেন। একইসঙ্গে বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
মাস্কের দায়িত্বপ্রাপ্তি নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। কংগ্রেসের একাংশ এবং এমনকি ট্রাম্পের নিজ দলের ভেতরেও এ নিয়ে অসন্তোষ ছিল। কংগ্রেস এখনও ডজ-কে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত একটি বিল নিয়েও মাস্ক ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে মতানৈক্য প্রকাশ্যে আসে। বিলটিতে নাগরিকদের কর মওকুফ ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন মাস্ক।
ট্রাম্প যেখানে বিলটিকে ‘একটি বড় এবং সুন্দর বিল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, সেখানে মাস্ক পরদিন সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই বিল আসলে সরকারের খরচ কমানোর লক্ষ্যে ডজ-এর অধীনে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, সেগুলোকে ব্যর্থ করে দেবে। আমার মতে, একটি বিল হয়তো বড় হতে পারে, অথবা সুন্দর। কিন্তু দুটো একসঙ্গে হতে পারে না।”
এরপর ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান, তিনি আবার তার আগের কাজে মনোযোগ দিতে চান এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে আরও সক্রিয় হতে চান।
বর্তমানে ইলন মাস্ক বিশ্বের তিনটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির মালিক:
X (সাবেক টুইটার) – সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
টেসলা – বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা
স্পেসএক্স – মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
সংবাদ সম্মেলনে মাস্ক বলেন, “ডজ-এর নেতৃত্বে আমি গর্বিত। আমাদের দল অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক অর্জন করেছে। আমি নিশ্চিত, তারা ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।”
ইলন মাস্কের সরকার থেকে এই বিদায় তার জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু হতে পারে। প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক দুনিয়ায় তিনি আগেও প্রভাব ফেলেছেন, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ মাস্কের প্রস্থান এবং তার পরবর্তী মন্তব্যগুলো প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাধারা/এসআর