ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মুজাফফরাবাদ ও পাঞ্জাবে মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত

নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: মে ০৭, ২০২৫, ০২:২০ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

ভারতের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদ এবং পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকেতে একাধিক মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

বিবিসি'র সঙ্গে আলাপকালে হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়াবহ সেই রাতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

মুজাফফরাবাদ শহরের বাসিন্দা মুহাম্মদ ওয়াহিদের বাড়ির পাশেই অবস্থিত বিলাল মসজিদ। তিনি জানান, মধ্যরাতের পর প্রথম বিস্ফোরণের শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়।

"বিস্ফোরণে পুরো ঘর কেঁপে ওঠে। আমি ভয় পেয়ে দৌড়ে রাস্তায় বের হই। তখনই আরও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত হানে। মানুষ দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। চারদিকে আতঙ্ক আর কান্নার শব্দ," - বলছিলেন ওয়াহিদ।

তিনি জানান, হামলায় ওই এলাকার কয়েকজন নারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের কাছের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন মসজিদে হামলার ঘটনায়।

"বিলাল মসজিদটি খুব সাধারণ একটি মসজিদ ছিল। দিনে পাঁচবার আমরা সেখানে নামাজ পড়তাম। আমি কখনও দেখিনি, সেখানে কোনো সন্দেহজনক কিছু ঘটেছে। আমি বুঝতে পারছি না কেন মসজিদ লক্ষ্যবস্তু হলো," - ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওয়াহিদ।

বর্তমানে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বলে জানান তিনি।

পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে শহরের বাসিন্দা ইউনিস শাহ জানান, রাতে ভারতের ছোড়া চারটি ক্ষেপণাস্ত্র তাঁদের এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরে আঘাত হানে।

প্রথম তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র পরপর পড়ে, আর চতুর্থটি পড়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট পর। হামলায় একটি স্কুল, একটি কলেজ, একটি ছাত্রাবাস, একটি ছোট চিকিৎসাকেন্দ্র এবং পাশের মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়,- বলেন ইউনিস শাহ।

তিনি আরও জানান, আশপাশের আবাসিক ভবনগুলোরও ক্ষতি হয়েছে। কিছু পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে গেছে। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীরা রাতভর উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের বরাত দিয়ে দেশটির ইংরেজি দৈনিক ডন জানিয়েছে, মুরিদকের উম্মুলকুরা মসজিদে হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। একইভাবে মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদে হামলায় আরও তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছে দুই শিশু। এছাড়া কাশ্মীরের কোটলির আব্বাস মসজিদও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, পুরো হামলায় মোট ২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এমন হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে।


বাংলাধারা/এসআর