ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

বিদেশে বসে বিএনপির বিরুদ্ধে বদনাম করছেন ড. ইউনূস: এক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা আব্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০১:০২ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও উঠে এসেছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবার তার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন তিনি। সেখানে নিজের ক্ষোভের কথা অকপটে তুলে ধরেন এই প্রবীণ রাজনীতিক।

মির্জা আব্বাস বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, ড. ইউনূস জাপানে বসে বিএনপির বিরুদ্ধে বদনাম করছেন। দেশের বাইরে বসে দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া তিনি দেশবিরোধী বলেই মনে করেন। এই পর্যায়ে এসে আব্বাস প্রশ্ন তোলেন—লজ্জা লাগে না? দেশের বাইরে বসে নিজের দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা কি কোনো সভ্য, দায়িত্ববান নাগরিকের কাজ?

তাঁর মতে, আজকের সরকার যেভাবে 'সংস্কার' সংস্কার বলে জপছে, সেই সংস্কার আসলে দেশীয় না হয়ে বিদেশ নির্ভর হয়ে উঠেছে। তিনি দাবি করেন, বর্তমান সরকার বিদেশি পরামর্শকদের আমদানি করেছে, যেটা জিয়াউর রহমানের সময়ে কখনো ঘটেনি। জিয়া নিজেই ছিলেন একজন সংস্কারক, যিনি বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজের চিন্তা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। অথচ আজ বিদেশি উপদেশে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হচ্ছে—এটা নিয়ে ক্ষোভ লুকাননি আব্বাস।

বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হওয়া উচিত—এই প্রস্তাব প্রথম ড. ইউনূসই দেন। পরে তিনি নিজেই সেই প্রস্তাব থেকে সরে এসে জুন মাসের কথা বলেন। এতে করে রাজনৈতিক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। মির্জা আব্বাস সরাসরি বলেন, নির্বাচন না হলে এর দায়-দায়িত্ব ড. ইউনূসকে নিতে হবে।

তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের জনগণ নিজেরাই নির্বাচন আদায় করে নেবে। এমনকি দেশের ভৌগলিক সীমানা পর্যন্ত ঠিক থাকবে না—এমন কথাও বলেন তিনি, যা রাজনৈতিকভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর এক মন্তব্য।

বক্তব্যের সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তারা সবাই জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এই বক্তব্যে কয়েকটি দিক স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। প্রথমত, বিএনপির পক্ষ থেকে ড. ইউনূসকে আর নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং একজন রাজনৈতিক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যিনি বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, সরকারের সংস্কার নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিএনপি এটিকে বিদেশনির্ভর ও আত্মপরিচয়হীনতা হিসেবে চিহ্নিত করছে। আর তৃতীয়ত, নির্বাচন না হলে যে গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে—তা ইঙ্গিতে নয়, সরাসরি ভাষায় বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একসময় যিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কারণে 'গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক' হিসেবে বিবেচিত হতেন, সেই ড. ইউনূস এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। আর এর ফলে ভবিষ্যতের নির্বাচন, ক্ষমতার রূপরেখা এবং জাতীয় রাজনীতির গতি প্রকৃতি কোন দিকে যাবে—তা নির্ধারণে তাঁর অবস্থান এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বাংলাধারা/এসআর