ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানে উত্তাল আমেরিকা: লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৫, ১০:১৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন বিরোধী অভিযান ঘিরে উদ্ভূত বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে কারফিউ জারি করেছে শহর কর্তৃপক্ষ। শহরের মেয়র কারেন ব্যাস গতকাল মঙ্গলবার রাতে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

টানা পাঁচদিন ধরে চলা বিক্ষোভে শহরের কেন্দ্রস্থলে বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়, শহরের এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে (প্রায় ২.৬ বর্গকিলোমিটার) কারফিউ কার্যকর করা হয়েছে। এই কারফিউ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ব্যাস বলেন, গতরাতে অন্তত ২৩টি দোকান লুট করা হয়েছে। ব্যবসায়িক এলাকা জুড়ে গ্রাফিতি দিয়ে দেয়াল রঙিন করা হয়েছে। এতে বিপুল সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। যারা ডাউনটাউন এলএ-তে থাকেন না বা কাজ করেন না, তাদের অনুরোধ করছি ওই এলাকা এড়িয়ে চলতে।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেন, কারফিউ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

মেয়র ব্যাস জানান, এই কারফিউ কয়েকদিন ধরে চলতে পারে, তবে এটি কেবল শহরের একটি ছোট অংশেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

“যদিও ঘটনাগুলো শুধুমাত্র ডাউনটাউনের একটি ক্ষুদ্র অংশে ঘটেছে, মিডিয়ার উপস্থাপনায় মনে হচ্ছে যেন গোটা এলএ শহর জুড়ে সংকট চলছে- যা আদৌ সত্য নয়।”

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসন বিরোধী কঠোর অভিযানের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেস ছাড়াও নিউ ইয়র্ক, শিকাগো, আটলান্টাসহ যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বড় শহরে বিক্ষোভ চলছে। এসব আন্দোলনের মূল উপজীব্য হচ্ছে, “অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধের নামে প্রশাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও জাতিগত বৈষম্যের পুনঃউৎপাদন”।

এদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এবং এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছেন। যেন তিনি নিজের দেশের জনগণকে কোনো শত্রু দেশের সেনাবাহিনীর চোখে দেখছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট যাদের টার্গেট করছেন, তারা কোনো সন্ত্রাসী নয়- তারা আমাদের সমাজেরই অংশ। রান্নাঘরের কর্মী, গার্ডেনার, দিনমজুর, দর্জি- তারা আমাদের কমিউনিটির পরিশ্রমী সদস্য।

নিউজম সতর্ক করে বলেন, যদি কাউকে শুধু গায়ের রঙ বা সন্দেহের ভিত্তিতে পরোয়ানা ছাড়া রাস্তা থেকে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে আমরা কেউই নিরাপদ নই। স্বৈরাচারীরা সবসময় দুর্বলদের আক্রমণ করে শুরু করে- এবং পরে তা সবার ওপরই নেমে আসে।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে অনড় থেকে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগ ঘাঁটিতে সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন,

“আমাদের সেনারা যুগের পর যুগ বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য লড়েছে। এখন আমাদের নিজেদের দেশেই যেন তৃতীয় বিশ্বের মতো বিশৃঙ্খলা চলছে- বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ায়।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমি একজন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে সেটা হতে দেব না। যুক্তরাষ্ট্রে অরাজকতা ও অবৈধ অনুপ্রবেশের স্থান নেই।”

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি আমেরিকায় অভিবাসন ইস্যুকে কেন্দ্র করে চলমান নীতিগত ও রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। একপক্ষ মনে করছে এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বাভাবিক পদক্ষেপ, অন্যপক্ষ দেখছে এটি মানবাধিকারের ওপর একটি গভীর আঘাত হিসেবে। এ দ্বন্দ্ব কেবল আইনপ্রয়োগ বা বিক্ষোভে সীমাবদ্ধ না থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

 

বাংলাধারা/এসআর