ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ট্রাম্পের পাশে থেকে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ালেন ইলন মাস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ১১:৫৬ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

সরকারি দক্ষতা বিভাগে মেয়াদ শেষ, সমালোচনা ও বিতর্কে বিদায় প্রযুক্তি উদ্যোক্তার

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের আলোচিত উদ্যোগ "ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি" বা ডিওজিই-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রযুক্তি ও মহাকাশ উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক অবশেষে সরে দাঁড়ালেন। দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি জানালেন, সরকারি খরচ কমানো ও অপচয় রোধে কাজ করার সুযোগের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞ।

টেসলা ও স্পেসএক্স প্রধান এক বিবৃতিতে বলেন, “ডিওজিই মিশন একদিন সরকারের নিত্যদিনের কাজের অংশ হয়ে উঠবে, এই আশাই করি।” তবে বিদায়ের এই ঘোষণা আসার মাত্র একদিন আগে তিনি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। সদ্য উত্থাপিত ব্যয়বহুল একটি বিল প্রসঙ্গে মাস্ক বলেন, “একটি বিল বড় হতে পারে, আকর্ষণীয়ও হতে পারে; কিন্তু দুটো একসঙ্গে হওয়া কঠিন। এটি আমার ব্যক্তিগত মত।”

২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম বড় আর্থিক অনুদানদাতা ছিলেন মাস্ক। নির্বাচনী প্রচারণার বিভিন্ন মঞ্চে ট্রাম্পের পাশে দেখা গেছে তাকে। এমনকি নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্প তাকে ‘নতুন যুগের তারকা’ বলেও আখ্যা দেন। সেই সুসম্পর্ক থেকেই ডিওজিই বিভাগের দায়িত্ব পান মাস্ক।

ডিওজিই গঠনের পর মাস্ক ঘোষণা দেন, তিনি খুঁজছেন 'সুপার হাই আইকিউ' সম্পন্ন কর্মী, যারা সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টা কাজ করতে ইচ্ছুক এবং সরকারি ব্যয় কমাতে আগ্রহী। এরপরই একের পর এক বিভাগীয় সংস্কার ও দপ্তর বন্ধের মাধ্যমে হাজার হাজার সরকারি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়।

তবে এই সংস্কার যাত্রা খুব বেশি মসৃণ ছিল না। সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাস্কের দ্বন্দ্ব, কাজের পদ্ধতি নিয়ে অভিযোগ এবং দ্রুত পরিবর্তনের চাপ- সব মিলিয়ে ডিওজিই পরিণত হয় এক ধরনের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে।

এপ্রিলে মাস্ক নিজেই স্বীকার করেন, “ডিওজিই এখন অনেকের অসন্তোষের বলির পাঁঠা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি জানান, সব লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

ডিওজিই প্রধান হিসেবে মাস্কের বিরুদ্ধে এখনো কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ডিওজিই ব্যবহার করে অনুমোদন ছাড়া মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করেছেন। এসব অভিযোগে আদালতের মুখোমুখিও হতে হবে তাকে।

এদিকে, মাস্কের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যেও নেমে এসেছে অস্থিরতা।

  • টেসলা: সম্প্রতি একাধিক ডিলারশিপে আগুন লাগার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি বিপাকে পড়েছে।
  • শেয়ারবাজার: টেসলার শেয়ারদর পড়েছে বেশ কিছুটা।
  • স্পেসএক্স: বহু প্রতীক্ষিত স্টারশিপ উৎক্ষেপণ ভারত মহাসাগরের ওপর বিস্ফোরিত হয়, যা বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
  • ‘এক্স’ সোশ্যাল মিডিয়া: সম্প্রতি দু’ঘণ্টার বিভ্রাটে মাস্ক নিজেই টুইট করে বলেন, “এই ধরণের বিভ্রাট দেখাচ্ছে, বড় ধরনের কার্যকর পরিবর্তন দরকার।”

সবকিছু মিলিয়ে একদিকে যেমন মাস্কের প্রশাসনিক দায়িত্ব শেষ হলো, অন্যদিকে বাড়ছে তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও সমালোচনার মাত্রা। ডিওজিই-এর লক্ষ্য ছিল সরকারকে আরও দক্ষ ও খরচ-সাশ্রয়ী করা, কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সফল হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

মাস্কের বিদায় হয়তো প্রশাসনিকভাবে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও প্রযুক্তি অঙ্গনে তার ভূমিকা ও বিতর্ক আরও কিছুদিন আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে- এ কথা বলাই যায়।


বাংলাধারা/এসআর