ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

আইপিএল শিরোপা উদযাপনে পদদলনের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি, বেঙ্গালুরুতে নিহত ১১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ০৪, ২০২৫, ১০:৩৩ রাত  

ছবি: এপি

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে আইপিএলের শিরোপা উদযাপন উৎসব পরিণত হলো বিভীষিকায়। বুধবার সন্ধ্যায় এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদদলনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১ জন, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন।

চলতি আইপিএল আসরে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় কর্ণাটকভিত্তিক দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। এই ঐতিহাসিক জয় উদযাপন করতে রাজ্যজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। মূলত আজ বিকেল ৫টায় বেঙ্গালুরু শহরের বিধান সৌধ এলাকা থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত একটি ‘ভিক্টরি প্যারেড’ আয়োজনের কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে সে পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে শুধুমাত্র স্টেডিয়ামের মধ্যেই একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ)।

বিকেল ৫টার মধ্যে সংবর্ধনা শেষ করে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও তার দলের সদস্যদের।

কিন্তু এমন এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানেই দেখা দেয় ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা। সকাল থেকেই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের চারপাশে জড়ো হতে থাকেন লাখো উৎসাহী সমর্থক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিড় ছিল এতটাই বিপুল যে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রয়োজনের তুলনায় পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ছিল অনেক কম।

গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে পড়েন হাজারো দর্শক। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেকে পড়ে যান, তাদের উপর দিয়ে হেঁটে যায় উত্তেজিত জনতা। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ শুরু করলে আরও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই উৎসবস্থল রূপ নেয় এক মৃত্যুকূপে।

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য- স্ট্রেচারে করে আহত ও নিথর দেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে, চারপাশে কান্না আর আর্তনাদ।

কর্ণাটকের উপ মুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার এক বিবৃতিতে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা পাঁচ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম। কিন্তু উপস্থিত জনতার সংখ্যা আমাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়। যেহেতু এটা ছিল উৎসব, তাই আমরা পুলিশকে কঠোর না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম। এ ধরনের দুর্ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা ক্ষমা চাইছি।”

কর্ণাটক পুলিশ জানায়, আগের রাত থেকেই স্টেডিয়াম ও আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। তবে এতো বিশাল জনসমাগম যে হবে- তা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। পুলিশের ভাষায়, “আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।”

এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হলেও আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আইপিএলের মতো বিশাল আয়োজনের একটি উদযাপন যখন জননিরাপত্তার ব্যাপারে এই মাত্রায় উদাসীনতার শিকার হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- কে নেবে এর দায়? কেন যথাযথভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? কেন এত বড় সংখ্যক মানুষকে স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলো?

আইপিএলের একটি দলের প্রথম শিরোপা জয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বড় এক গর্বের বিষয় হলেও সেই আনন্দ রঙ হারিয়ে ফেলেছে প্রাণ হারানো ১১ জনের পরিবারের কাছে। যারা এসেছিলেন উৎসবে যোগ দিতে, ফিরে গেছেন শোক আর শূন্যতা নিয়ে।

এই মর্মান্তিক ঘটনার তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে নিন্দার ঝড়।

এখন দেখার বিষয়, কর্ণাটক সরকার এবং কেএসসিএ কীভাবে এ ঘটনার দায়ভার গ্রহণ করে এবং কী ধরনের প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেয় ভবিষ্যতে এমন ট্র্যাজেডি রোধে। একদিকে শিরোপা উৎসব, অন্যদিকে প্রাণহানি- বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের আজকের দিনটি তাই ইতিহাসে রয়ে গেলো এক গৌরব আর গভীর শোকের প্রতিচ্ছবি হয়ে।


বাংলাধারা/এসআর