আ.লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় অন্তর্বর্তী সরকার: অভিযোগ তারেক রহমানের
প্রকাশিত: মে ০৯, ২০২৫, ১১:২১ রাত

ফাইল ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা কৌশলে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে ‘সংস্কারের নামে’ একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক বিভাজনের পরিবেশ তৈরির অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
শুক্রবার (৯ মে) রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ি বার্ক মিলনায়তনে বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরাম আয়োজিত 'ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময়' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
তারেক রহমান বলেন, "অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে জনগণের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—তারা আদৌ দায়িত্ব পালন করছে কিনা। বরং দেখা যাচ্ছে, তারা হয়তো এমন এক প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চাইছে, যাতে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্যে ফাটল ধরানো যায় এবং একসময়কার স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করা যায়।"
বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনের গুম প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, "২০১৩ সালে র্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা সুমনকে গুম করে। আজও তার কোনো খোঁজ নেই। অথচ সম্প্রতি তার বোনের বাসায় পুলিশ হানা দিয়েছে। প্রশাসন বলছে, তারা সুমনের ব্যাপারে কিছু জানে না। কিন্তু এরই মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, সেটিও নাকি সরকারের অজানা। তাহলে আসলে অন্তর্বর্তী সরকার জানে কী?"
তিনি অভিযোগ করেন, এসব ঘটনা প্রমাণ করে সরকারের ভেতরে একটি সচেতন এজেন্ডা কাজ করছে-একদিকে পুরোনো স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের জন্য নিরাপদ প্রস্থানের পথ তৈরি, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির পাঁয়তারা।
তারেক রহমান বলেন, "নাগরিক নিরাপত্তা সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু পরিচয়ের ওপর নির্ভর করে না, বরং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উপর নির্ভর করে। আমরা দেখেছি, স্বৈরাচারী সরকারের সময় আয়নাঘরের মতো বন্দিশালায় বিনা বিচারে মানুষ আটক থাকত। আজও সেই ভয়াবহতা ফিরিয়ে আনার শঙ্কা থেকে যায়, যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকে।"
তিনি বলেন, "একটি দেশের সংবিধান জনগণের চেতনার প্রতিফলন হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ তার ক্ষমতা ধরে রাখতে সংবিধানকে বারবার দলীয় সংবিধানে পরিণত করেছে। বিএনপি মনে করে, সংবিধানের মৌল ভিত্তিগুলো অক্ষুণ্ন রেখে সময়োপযোগী সংস্কার এখন অত্যন্ত জরুরি।"
তারেক রহমানের ভাষায়, “সরকার হয়তো একদিকে রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করছে, অন্যদিকে পর্দার আড়ালে পুরনো স্বৈরাচারদের আবার মূলধারায় ফিরিয়ে আনার রাস্তাও তৈরি করছে। এতে করে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা বাড়ছে- এই সরকার আদৌ নিরপেক্ষ কিনা।”
তিনি বলেন, "আমরা এখনো আন্তরিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছি, যাতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। তবে এই সহযোগিতা যেন আস্থা হারিয়ে না ফেলে- সেজন্য সরকারকে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।"
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জন গমেজ। আরও বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, এবিএম আব্দুস সাত্তার, ফজলুল হক মিলন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ।
বাংলাধারা/এসআর