ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

নিশানা আইনের খাপে:

আদালতের রায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক দেখছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ১২:১৩ দুপুর  

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় এনে নিষিদ্ধ করার যে পথ তৈরি হয়েছে, তা ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, বহুদিন ধরেই যে দাবি তারা করে আসছিলেন- আইন ও আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিচার- সরকার শেষ পর্যন্ত সেই পথেই হাঁটছে।

শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের নেতারা এ প্রতিক্রিয়া জানান। ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ আলোচনা শেষে বিএনপি স্পষ্ট করে জানিয়েছে- আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের উদ্যোগে তাদের সম্মতি থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, সরকার যেভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় এনেছে, তা মূলত বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। তবে এও মনে করিয়ে দেন তারা, বিচার শুরু হলেও এখন পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। এতে ভবিষ্যতের নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা বিএনপির।

দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, "বিচার যতদিন চলবে ততদিন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে— ঠিক আছে। কিন্তু এই বিচার কতদিনে শেষ হবে, তা কি কেউ বলছে? এর মধ্যে যদি ছাত্ররা দাবি তোলে যে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনও হবে না, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে?"

উল্লেখযোগ্য যে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি লিখিত প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়, যেখানে তারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়।

শনিবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে নেয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে রাজনৈতিক দল, অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকেও শাস্তির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

বিএনপি মনে করে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন এবং সরকারের পদক্ষেপ অনেকটা ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ’-এর মতো। কারণ, নাগরিক পার্টিকে অনেকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা দল হিসেবে দেখে। আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি যুক্ত না হলেও তাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে দলটি।

তবে শনিবার রাত পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সংবাদ সম্মেলন হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, রোববার বিএনপি এ বিষয়ে বিস্তারিত অবস্থান জানাবে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা আবারও চূড়ায় পৌঁছেছে। একদিকে সরকার চাইছে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতীতের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে, অন্যদিকে বিএনপি চাইছে এই প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও সময়সীমা নিশ্চিত হোক।

এই পরিস্থিতিতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। বিচারাধীন একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা, নির্বাচন আদৌ কবে হবে, এসব বিষয়ে এখনো স্পষ্ট বার্তা আসেনি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। বিএনপি মনে করে, সরকার যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন নিয়ে পরিষ্কার রূপরেখা না দিলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হবে।

বাংলাধারা/এসআর