ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

‘হাসিনার শাসনেই আওয়ামী লীগের পরিণতি নির্ধারিত হয়েছে’

বাংরাধারা রিপোর্ট:

 প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৫, ০১:৫৩ দুপুর  

ফাইল ছবি

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার যে সামান্য সম্ভাবনা ছিল, তাও বিলীন হয়েছে শেখ হাসিনার আচরণে। নিজের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব ও প্রতিবিপ্লবের উসকানি দলটিকে একপ্রকার ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’র পথেই ঠেলে দিয়েছেন তিনি। ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পরও থামেননি - বরং সেখান থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারকে উচ্ছেদের আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের সংঘাতে নামতে বলেছেন। তার এই দিকনির্দেশনায় অনেকেই এখন কারাগারে, বাকিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। শুরু হয়েছে দলটির নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়াও। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে দলটির বিচার হবে এবং বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।

গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি দল ও রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের সামনে তার সেই একনায়কতন্ত্র টিকে থাকতে পারেনি।”

তিনি বলেন, “এত বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পরও শেখ হাসিনা অনুশোচনা তো দূরের কথা, উল্টো বিদেশ থেকে দেশীয় কর্মীদের উসকে দিচ্ছেন। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।”

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “গণহত্যার বিচার শেষ হলেই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে। দলটির এই অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী শেখ হাসিনা।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনা তার শাসনামলেই আওয়ামী লীগের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। এখন তার কারণেই দলটির দাফন-কাফনের কাজটিও সম্পন্ন হয়েছে।”

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, “শেখ হাসিনা বরং তার ভুল স্বীকার করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। কিন্তু তিনি ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়ে দলকে চূড়ান্ত বিপদের মুখে ফেলেছেন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ-উর রহমান মনে করেন, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশলগত ভুল এবং জনগণবিচ্ছিন্ন শাসনব্যবস্থার জন্যই আওয়ামী লীগ আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল প্রশ্ন তুলেছেন, “গত নয় মাসে আওয়ামী লীগ আদৌ কী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে? যে এভাবে ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করতে হলো?”

বর্তমানে কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না, তাই সেই সময়ের রাজনীতি তিনি তেমন বুঝতেন না। কিন্তু ২০২৪ সালে দেশের পরিস্থিতি তার পুরোপুরি জানা থাকা সত্ত্বেও তিনি আত্মঘাতী পদক্ষেপ নিয়েছেন।”

আরেকজন নেতা, যিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, বলেন, “শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে কাউকে বিশ্বাস না করা। ক্ষমতার নেশা তাকে অন্ধ করেছিল। তিনি আজও বিশ্বাস করেন, তিনি বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী, যদিও বাস্তবতা ভিন্ন।”

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ যে সম্পদ লুট করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী দল এবং প্রতিবেশী দেশের সহায়তায় ষড়যন্ত্র করে এসেছে। এই দল নিষিদ্ধ না হলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।”

প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে দলটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশের রাজনীতি একদলীয় করে ফেলেন, যার পরিণতিতে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে দলটি একদিকে যেমন বিভিন্ন সফলতা দাবি করেছিল, তেমনি অগণতান্ত্রিক আচরণ, গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং প্রশাসনিক লুটপাটে জড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত তার শাসনকালেই দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারিত হলো।


বাংলাধারা/এসআর