ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

চট্টগ্রাম বন্দরই অর্থনীতির গেটওয়ে: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক

 প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৫, ০১:০৪ দুপুর  

ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরেই আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। এটি ছাড়া দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার বাস্তব কোনো বিকল্প নেই।"

বুধবার (১৪ মে) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-৫ টার্মিনালে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনূস বলেন, “এই বন্দর দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড যদি দুর্বল হয়, তবে শরীর চলতে পারে না। একইভাবে, এই বন্দর যদি আধুনিক না হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিও সচল হবে না।”

তিনি বলেন, “বন্দরের মাধ্যমে আমরা দেশের রপ্তানি বাড়াতে পারি, আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত খালাস করতে পারি- এটাই একটি আধুনিক বন্দরের কাজ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের কাঙ্ক্ষিত রূপান্তর হচ্ছে না। যানজট, পণ্য খালাসের ধীরগতি ও ট্রাকচাপা রাস্তাগুলো এখনো আমাদের দৈনন্দিন সমস্যা।”

বিশ্বমানে বন্দর পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “বন্দরকে বিশ্বমানের করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি থেমে যাবে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছি।”

সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ড. ইউনূসের প্রথম চট্টগ্রাম সফর। সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।

বন্দর পরিদর্শন শেষে তিনি সার্কিট হাউসে যান, যেখানে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট নতুন সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প এবং অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়ক উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন।

সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের জন্য ২৩ একর জমির রেজিস্টারকৃত দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এ হাসপাতাল ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

বিকালে ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে ২০১১ থেকে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই অনুষ্ঠানে ২০১৫-২০২৫ সালের ২২ জন পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকেও সম্মাননা দেওয়া হয়।

বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে অনন্য অবদানের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি. লিট) ডিগ্রি প্রদান করে।

সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে প্রধান উপদেষ্টা যান হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে, যেখানে তার পৈতৃক বাড়ি অবস্থিত। সেখানে তিনি আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে সময় কাটান।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

 

বাংলাধারা/এসআর