গাজার স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় ১৯ জন নিহত
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

ছবি: সংগৃহিত
গাজা আবার কাঁদছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে শিশুদের স্বপ্ন, মায়েদের কোলে নিথর হয়ে পড়ছে সন্তানেরা। যুদ্ধের ভয়াল গ্রাসে এবার ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্য হলো একটি স্কুল, যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশু, সাংবাদিক, এবং রেড ক্রসের কর্মীরাও। গাজার সবচেয়ে অল্পবয়সী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ইয়াকিন হাম্মাদও এই হামলার শিকার।
ঘটনাটি ঘটেছে অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের একটি স্কুলে, যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ইসরায়েলি বিমান হামলায় সেখানে মারা গেছেন ১৯ জন। আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন রেড ক্রস কর্মী, এক সাংবাদিক এবং একাধিক শিশু।
মাত্র ১১ বছর বয়সী ইয়াকিন হাম্মাদ ছিলেন গাজার সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় একটি মুখ। শিশুদের ভাষায় গাজার জীবনকে তুলে ধরার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। সেই কণ্ঠ আর শোনা যাবে না। বোমার শব্দে থেমে গেছে ইয়াকিনের ক্যামেরা, বন্ধ হয়ে গেছে একটি ছোট্ট হৃদয়ের ধুকপুক।
জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (WFP) সতর্ক করেছে, গাজায় অপুষ্টির কারণে লাখো শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে ৭০ হাজারের বেশি শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। সম্প্রতি চার বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিন না খেতে পেয়ে মারা যাওয়ার খবর সেই আশঙ্কাকে বাস্তবে পরিণত করেছে।
জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল বারবার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে। এতে শিশুদের উপর সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং শিশু মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছেন। দেইর আল-বালাহ শহরে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত এক তাঁবুতে হামলায় এক মা ও তাঁর সন্তানরা প্রাণ হারান।
কান ইউনিসের বানি সুহেইলায় ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছে আরও এক শিশু। জাবালিয়ায় আরেক হামলায় মারা গেছেন পাঁচজন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুই নারী ও এক শিশু।
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক সংবাদ এসেছে চিকিৎসক আলা আমির আল-নাজ্জারের পরিবার থেকে। তাঁর ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই নিহত হয়েছেন, একমাত্র জীবিত সন্তান ১১ বছরের আদম এখন আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
এ অবস্থায় ইউরোপ ও আরব বিশ্বের ২০টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে মাদ্রিদে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্পেন সেখানে আহ্বান জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হোক। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করা।
প্রায় তিন মাস ধরে চলা অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে আরও হাজার হাজার শিশু অনাহারে মারা যেতে পারে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইসরায়েলের চলমান ১৯ মাসব্যাপী হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অন্তত ৩১ শতাংশই শিশু। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে, কারণ বহু মৃত্যু এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হয়নি।
শিশুদের মৃত্যু আর মা-বাবার কান্না কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়ই নয়। একটি সমাজের ভবিষ্যৎ যখন ধ্বংসের মুখে, তখন সভ্য দুনিয়ার দায়িত্ব সেই ভবিষ্যৎকে রক্ষা করা। আজ গাজায় মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে ধোঁয়া ও ধ্বংসের নিচে। ইয়াকিনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি শিশু-জগত নিঃশেষ হয়ে গেলেও প্রশ্ন থেকে যায়-এই নিষ্ঠুরতা কবে থামবে?
বাংলাধারা/এসআর