ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সিরিয়ার সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেবে সৌদি আরব ও কাতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 প্রকাশিত: জুন ০২, ২০২৫, ১১:৩৮ দুপুর  

ছবি: সংগৃহিত

বাশার আল-আসাদের পতনের পর এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত থাকা এই দেশটি এখন পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে। এমন সময় সিরিয়ার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিল মধ্যপ্রাচ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ- সৌদি আরব ও কাতার। তারা জানায়, সিরিয়ার সরকারি কর্মচারীদের তিন মাস ধরে বেতন প্রদান করবে এ দুই দেশ।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স-এর এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সৌদি আরব ও কাতারের এ যৌথ উদ্যোগ মূলত সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।

দামেস্কে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেন, “সৌদি আরব ও কাতার একসঙ্গে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।”

যদিও কত অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি, তবে জানা গেছে, এই পদক্ষেপটি কাতারের পূর্ববর্তী আর্থিক সহায়তার ধারাবাহিকতা এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে ১৫ মিলিয়ন ডলারের সিরীয় বকেয়া পরিশোধের পরবর্তী উদ্যোগ হিসেবে এসেছে।

এই আর্থিক সহায়তার ঘোষণা আসে এমন সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখে সৌদি আরব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় সৌদি যুবরাজের অনুরোধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল জানান, তার দেশ শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, বরং সিরিয়ার পুনর্গঠন ও আর্থিক পুনরুদ্ধারের পথে একটি ‘মূলভিত্তিক অংশীদার’ হতে চায়। এজন্য তিনি সৌদি আরবের একটি উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক প্রতিনিধি দল নিয়ে সিরিয়া সফর করছেন। প্রতিনিধি দলটি সিরিয়ার সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কৃষি, জ্বালানি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবে।

তিনি আরও জানান, সৌদি ব্যবসায়ীদের একটি বড় প্রতিনিধি দলও আগামী দিনে সিরিয়া সফর করবেন এবং দেশটির অর্থনীতিকে চাঙা করতে বিনিয়োগের সুযোগ খতিয়ে দেখবেন।

আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন সুন্নি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের কাছে বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া এখন কূটনৈতিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয়। নতুন নেতৃত্ব আরব ও পশ্চিমা বিশ্বে সম্পর্ক জোরদার করে পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যেতে চায়।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থনকে কেন্দ্র করে দেশটির বর্তমান সরকার আশা করছে, এবার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সহায়তা ও বিনিয়োগ সিরিয়ার ভবিষ্যৎকে অনেকটাই বদলে দেবে।

এদিকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা শিগগিরই কুয়েত সফরে যাচ্ছেন। কুয়েতের আমির শেখ মেশাল আল-আহমাদ আল-সাবাহর আমন্ত্রণে এই সফর অনুষ্ঠিত হবে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট দপ্তরের সূত্র জানায়, এটি হবে শারার প্রথম আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সফর, যেখানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ দুই অর্থনৈতিক শক্তির এ ধরনের সহযোগিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার জন্য নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক। বেতন সহায়তা শুধু কর্মচারীদের জীবিকা রক্ষা নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো পুনঃগঠনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং পুনর্গঠনে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে এটি এক নতুন দিনের সূচনা হতে পারে সিরিয়ার জন্য।


বাংলাধারা/এসআর